কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। দেশের সব জায়গায় কম-বেশি এই ফল পাওয়া যায়। আকারে যেমন বড়ো তেমন পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কাঁচা অথবা পাকা দুই অবস্থাতেই এই ফল খাওয়া যায়। সুস্বাদু এই কাঁঠালের জনপ্রিয়তাও রয়েছে অনেক। ডেইলি লাইভের আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব— কাঁঠাল কী, কাঁঠালের ব্যবহার, কাঁঠালের পুষ্টিগুণ, কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন শুরু করা যাক।

কাঁঠালের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা!

কাঁঠাল:

কাঁঠালকে ইংরেজিতে ডাকা হয় Jackfruit বলে এবং কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম  Artocarpus heterophyllus। কাঁঠাল মূলত মোরাসিয়া পরিবারের আরটোকার্পাস গোত্রের ফল। কাঁঠালের আদি বাসস্থান বা উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাট এবং মালয়েশিয়ার রেইন ফরেস্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। কাঁঠাল আকৃতিতে বেশ বড়ো। তবে, এই ফলটি বাইরে থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে ফলটি কাঁচা নাকি পাকা। কিন্তু পাকা ফলের সুগন্ধ আপনাকে অনায়াসে কাছে টেনে নেবে। বসন্ত-গ্রীষ্মে পাওয়া যায় কাঁচা কাঁঠাল এবং গ্রীষ্ম-বর্ষার মৌসুমে গিয়ে পাওয়া যায় পাকা কাঁঠাল। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট মৌসুমি ফল হিসেবে এর জনপ্রিয়তাও রয়েছে অনেক।

কাঁঠালের জাত:

কাঁঠালের জাতের মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় গালা বা গলা এবং খাজা। ‘রসখাজা’ও রয়েছে এই দুই জাতের মাঝামাঝি বৈশিষ্টের অধিকারী। আরও অনেক জাতের মধ্যে হাজারীও পাওয়া যায় আমাদের দেশে।

  • গালা বা গলা- পাকা গলা বা গালা জাতের কাঁঠালের কোষ অনেক রসালো, মিষ্টি ও নরম হয়ে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে টক-মিষ্টি স্বাদেরও পাওয়া যায়। কোষগুলো ছোটো প্রকৃতির হয়ে থাকে। কাঁঠালের খোসার গায়ের কাঁটাগুলো চ্যাপ্টা হয়। ফল পাকার পর রং একটু লালচে-হলুদাভ হয়। কোষগুলোকে সহজেই পৃথক করা যায়।
  • খাজা- এই জাতের কাঁঠালের কোষগুলো বড়ো এবং পাকার পর শক্ত বা কচকচে রসালো হয়ে থাকে। খাজা জাতের কাঁঠালের কোষ এর রং হালকা হলুদ এবং পানসে স্বাদের হয়ে থাকে। হজমে দেরি হওয়ায় অনেকে এই জাত পছন্দ করেন না, তবে এর কচকচে স্বাদের জন্য আবার এটি অনেকের অতি পছন্দের। এই খাজা জাতের কাঁঠাল পাকার পর খোসার রং সবুজাভ-ই থাকে এবং কাটাগুলো মসৃন ও বড়ো হয়ে থাকে।

কাঁঠালের পুষ্টি উপাদান:

কাঁঠাল কেবল সহজলভ্য ও সুস্বাদুই নয়, এটি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধও বটে। কাঁঠালে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ নানাবিদ পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে, কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের স্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও কাঁঠালে ফ্যাট এর পরিমাণ অনেক কম থাকে।

কাঁঠালের ব্যবহার:

পাকা কাঁঠালের কোষ ফল হিসেবে খাওয়া হয় এবং কাঁঠালের বীজ সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। পাকা কাঁঠালের রস হতে তৈরি করা হয়- বিভিন্ন জ্যাম, জেলী ও কাঠালসত্ব। পাকা কাঁঠালের রস থেকে আরও তৈরি হয়- বিভিন্ন কেক, পিঠা, এবং ডেজার্ট। কাঁচা কাঁঠালের খোসা ছাড়িয়ে পুরো অংশটাই রান্না করে খাওয়া হয়। বৈশাখের উৎসব এ কাঁঠালের ‘পাছন’ রান্না করা হয় যা একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এছাড়া কাঁচা কাঁঠালের বিভিন্ন সবজি, বিরিয়ানি, বার্গার বানিয়েও খাওয়া হয়।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা জানলাম কাঁঠাল কী, কাঁঠালের জাত, এর পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে। এইবার আমরা জানবো- কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

কাঁঠালের উপকারিতা:

১। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ হওযায় কাঁঠাল রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

২। কাঁঠালে আরও পাওয়া যায় ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি মানুষের দেহে তৈরি হয় না। আর এই ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে। তাই, কাঁঠাল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।

৩। কাঁঠালে উপস্থিত রয়েছে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস, যা আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে ।

৪। কাঁঠালে আরও আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানুষের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-র‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও সর্দি-কাশিজনিত রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

৫। দুচিন্তা এবং ভয় কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী।

৬। বদহজমজনিত সমস্যা রোধ করতে কাঁঠাল সহায়তা করে।

৭। কাঁঠাল গাছের শেকড়ের নির্যাস হতে তৈরি হয় হাঁপানী রোগের ওষুধ।

৮। চর্মরোগ, জ্বর, ডায়ারিয়া নিরাময়েও কাঁঠালের শেকড় বেশ কার্যকরী।

৯। রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কাঁঠালে থাকা খনিজ ম্যাঙ্গানিজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০। হাঁড়ের গঠন ও হাঁড় শক্তিশালীকরণে কাঁঠালে বিদ্যমান থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১। কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি৬; যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

১২। কাঁঠালে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয়; এটি রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখে।

১৩। শিশুদের ভিটামিনের চাহিদা পূরণে ছয় মাস বয়সের পর থেকে খাবারের পাশাপাশি কাঁঠাল খাওয়ালে শিশুদের ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ হয়।

১৪। কাঁঠাল ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

১৫। দেহের রক্তাসল্পতা দূরীকরণে কাঁঠালে বিদ্যমান খনিজ উপাদান আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

⏩ আরও পড়ুন: ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা!

কাঁঠালের অপকারিতা:

১। যদিও কাঁঠাল খুবই উপকারী; কিন্তু ব্যক্তিভেদে এটি অনেকের শরীরে প্রতিকূলতা সমস্যা ও আ্যলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

২। কোনো কিছুই অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। ঠিক তেমনি একসাথে অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠাল  খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩। রক্ত সংক্রান্ত রোগীদের কাঁঠাল খাওয়া একদমই উচিত নয়।

৪। কাঁঠালে প্রচুর শর্করা থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণের তুলনায় বেশি গ্রহণে এটি তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

৫। কোনো ধরনের অস্ত্র পাচারের দুই সপ্তাহ আগে কাঁঠাল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৬। যেকোনো ওষুধ এবং কাঠাঁল একসাথে খাওয়া উচিত নয়; এতে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।

*********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— কাঠাঁলের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top