প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নানা অসুখে-বিসুখে বিভিন্ন রকম ঔষধি গাছ ব্যবহার করে আসছে। সেই ব্যবহারের সূত্র ধরে ঔষধি গাছের উপাদান থেকে তৈরি হয়েছে বহু অ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। গাছের পাতা, ফুল, ফল, বাকল, শিকড় এমনকি সম্পূর্ণ গাছের রস ও ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়। বর্তমানে ঔষধি গাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছে ঔষধি গাছ ব্যবহার করে। তো চলুন, ডেইলি লাইভের আজকের এই আর্টিকেলে জেনে নিই— জাদুকরী ৫টি ঔষধি গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত।
জাদুকরী ৫টি ঔষধি গাছ
আজকের আর্টিকেলে আমরা যে জাদুকরী ৫টি গাছ সম্পর্কে জানব তা হলো— কল্কাসুন্দা, ভুঁই আমলা, হাতিশুঁড়, মেন্দা ও আকন্দ। এই গাছগুলো আমাদের গ্রামে বা পাহাড়ি অঞ্চলে হরহামেশাই জন্মায়। যদিও ঘনবসতির জন্য বনাঞ্চল নষ্ট হওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক গাছ বিলুপ্ত প্রায়। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই উল্লেখিত গাছগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
১। কল্কাসুন্দা:
কল্কাসুন্দা সাধারণত কাসুন্দা নামেও বেশ পরিচিত। এই কাসুন্দা বা কল্কাসুন্দা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Senna sophera । এটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যার সবুজ পাতার ফাঁকে দেখা মেলে আকর্ষণীয় হলুদ ফুলের। যে ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। এই কাসুন্দা গাছের পাতা, ফুল, মূলসহ সমগ্র গাছই ওষুধের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কল্কাসুন্দা গাছের ব্যবহার-বিধি:
- এই গাছের বাকল শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- এছাড়াও কাসুন্দা গাছের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
- এই গাছের পাতার রস কৃমি সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। এইজন্য যাদের কৃমির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই পাতার রস খেতে পারেন।
- এমনকি এই পাতার রস মিছিরির সাথে খেলে রক্ত সমস্যাও কমে যায়।
⏩ আরও পড়ুন: ফুলকপির উপকারিতা ও অপকারিতা!
২। ভুঁই আমলা:
প্রাচীনকাল থেকেই কবিরাজগন ভুঁই আমলা ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এটি অযত্নে আমাদের আশে-পাশে বেড়ে ওঠে। তাই, এই বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটি যত্রতত্র পাওয়া যায়। ভুঁই আমলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus niruri ।
ভুঁই আমলা গাছের ব্যবহার-বিধি:
- জন্ডিসের ওষুধ হিসেবে এই ভুঁই আমলা গাছের কাঁচা শেকড় বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে, এই গাছের কাঁচা শেকড় ২ গ্রাম, ৩-৪ টি গোল মরিচ সহ পান্তা ভাত এর পানি দিয়ে বেঁটে সকালে বিকেলে খালিপেটে খেলে জন্ডিস উপশম হয়।
- এছাড়াও হাঁড় ভাঙার যন্ত্রনা কমাতে এই গাছের পাতার রসের সাথে নুন মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় প্রলেপ লাগালে তৎক্ষণাৎ ব্যথার উপশম হয়।
৩। হাতিশুঁড়:
‘হাতিশুঁড়’ নামটি শুনে অন্য রকম মনে হলেও এই বর্ষজীবী, ছোটো, গুল্ম গাছটির রয়েছে বহু ভেষজ গুণ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum।
হাতিশুঁড় গাছের ব্যবহার-বিধি:
- ছত্রাকজনিত সমস্যা বা চুল্কানি অথবা লাল চাকা চাকা দাগ [দাদা] নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
- আঘাতজনিত ফোলায় পাতা বেঁটে অল্প করে প্রলেপ লাগালে জ্বালাপোড়া এবং ফোলা কমে।
- ব্রনের সমস্যা দূরীকরণে গোসলের ১ঘণ্টা আগে পাতা বেঁটে লাগালে ব্রন কমে।
৪। মেন্দা:
বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে এই গাছটির বহু নাম রয়েছে। যেমন— চাপাইত্তা, কুকুরচিতা, খারাজুরা, রতন ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Litsea monopetala। এই গাছের পাতা, বাকল, বীজ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মেন্দা গাছের ব্যবহার-বিধি:
- পাতা বেঁটে পানিতে ভিজিয়ে দিনে দুই বেলা খেলে পেটের পীড়া, রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
- বাৎ রোগে ক্ষেত্রে এর বীজের তেল ভালো কাজ করে।
- হাড় ভাঙার চিকিৎসায় এর বাকলের কাথ বানিয়ে চারদিকে প্রলেপ লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
⏩ আরও পড়ুন: কলার উপকারিতা ও অপকারিতা!
৫। আকন্দ:
প্রকৃতিতে এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটি দুই ধরনের পাওয়া যায়। একটি শ্বেত আকন্দ আর অন্যটি লাল আকন্দ। কিন্তু রোগভেদে দুইটিরই রয়েছে বিশেষ ব্যবহার। এর বৈজ্ঞানিক নাম Calotropis giganiex। আকন্দ গাছের পাতা,গাছের আঠা, বাকল সবকিছুই ঔষধ তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়।
আকন্দ গাছের ব্যবহার-বিধি:
- শরীরের কোনো স্থান ব্যথায় ফুলে গেলে আনন্দ পাঁতা বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
- শরীরে দাদ রোগ হলে আকন্দের আঠালো রস ২ফোঁটা করে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
- হাঁপানী রোগ উপশমে আকন্দ গাছের শিকড়ের ছাল চূর্ণ করে, তারপর আকন্দের আঠাতে ভিজিয়ে রেখে শুকিয়ে চুরুট বানিয়ে ধুমপান করা হয়। এতে উপকার মেলে।
*********
যাই হোক, প্রিয় পাঠক, এই ছিল— উপকারী ও জাদুকরী ৫টি ঔষধি গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।
সুন্দর লেখা। ❤️
অনেক নতুন তথ্য জানলাম গাছগুলো সম্পর্কে। ধন্যবাদ।