এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম : অদ্ভুত একটি মাথার রোগ!

এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম : অদ্ভুত একটি মাথার রোগ!

একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসেছেন স্লিপ ক্লিনিকে তার ঘুমের সমস্যা নিয়ে। তিনি সহজে ঘুমাতে পারতেন না এবং মাঝেমধ্যে তার মাথায় বিকট শব্দের কারণে তিনি জেগে ওঠতেন। মনে হতো কেউ টিনের চালে ঢিল মারছে। এতে তার ভালোভাবে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে। ডাক্তার বিস্তারিত শুনে বুঝতে পেরেছিলেন যে মাসে এক বা দু’বার তার সাথে এটি ঘটে। অবশেষে ডাক্তার ব্যাখ্যা করেছেন যে, ভদ্রলোকের ‘এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম বা ইএইচএস (Exploding Head Syndrome)’ বলে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তো, ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আমরা— অদ্ভুত একটি মাথার রোগ- এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব! চলুন শুরু করা যাক।

এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম

এটি ঘুমের এক ধরনের সমস্যা যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমানোর সময় তাদের মাথায় উচ্চ শব্দ শুনতে পান। এতে তাদের ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। কারও কাছে এটি বোমা বিস্ফোরণের মতো উচ্চ আওয়াজের হতে পারে বা অনেকের কাছে মনে হয় কেউ দরজায় জোরে কড়া নাড়ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় তাদের চোখে একটা উজ্জ্বল আলো জ্বলছে। কখনো কখনো তাদের পেশী অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে। সাধারণত দীর্ঘসময়ের জন্য কারও মাথায় ব্যথা হয় না, তবে কখনো কখনো মুহূর্তের জন্য মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

মাসে যেকোনো সময়েই এই রোগ দেখা দিতে পারে। সমস্যাটি মাসে কয়েকবার ঘটতে পারে এবং উচ্চ শব্দ প্রতিবার এক সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী হয়। কিছু লোকের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে ঘটতে পারে এই সমস্যা। এটি কোনো মারাত্মক সমস্যা নয়, তবে রোগটির জন্য ঘুমানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে এবং তাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে।

⏩ আরও পড়ুন: পানির উপকারিতা ও অপকারিতা!

আবিষ্কার

১৮৭৬ ​​সালে, সাইয়ালস মিশেল নামে একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এমন একজন রোগীর কথা প্রথম উল্লেখ করেছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত দুইজন রোগীকে নিয়ে যখন উনি একটি গবেষণা পত্র লিখেন, তখন রোগটি চিকিৎসা সমাজে সবার নজর কাড়ে। মিশেলের গবেষণা পত্র হতে জানা যায় যে রোগীরা বলেছেন যে, তারা তাদের মাথায় বিভিন্ন উচ্চ শব্দ শুনেছেন; যেমন- গুলির শব্দ, কাচ ভাঙা এবং ঘণ্টা বাজানোর শব্দ। কিন্তু ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ এটিকে ঘুমের রোগ বলে মানতো না।

যদিও এক্সপ্লোডিং হেড সিন্ড্রোম বিপজ্জনক নয়, তবুও এটি মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে। কখনো রোগীরা ভাবতে পারে যে তাদের স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের টিউমারের মতো একটি গুরুতর অসুস্থতা রয়েছে। যদি তারা এইরকম অনুভব করে, তবে তারা ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু যদি তারা সেভাবে অনুভব না করে, তারা হাসপাতালে যান না বা ডাক্তার দেখান না। এর ফলে পুরো জনসংখ্যার মধ্যে কতজন লোক এই রোগে আক্রান্ত তা জানা কঠিন ব্যাপার।

কারা এই রোগে আক্রান্ত হয়?

বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিকভাবে জানেন না কীভাবে বা কেন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়! কিছু লোক মনে করত যে, কানের ভেতরের কোনো সমস্যা থাকলে বা উচ্চ শব্দের কারণে হয়েছে, কিন্তু এখন তারা তা বিশ্বাস করে না। এখন সবচেয়ে কমন ধারণা হলো যে, একজন ব্যক্তি ঘুমানোর সময় মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলির মধ্যে সংকেত আদান প্রদানে ব্যত্যয় হওয়া থেকে এই রোগটি আসে।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন যে, কোন জিনিসগুলি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপ বোধ করা ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার পরিবারের কেউ আগে এই রোগে আক্রান্ত হলে এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা এমন কোনো বিশেষ জেনেটিক ফ্যক্টর খুঁজে পায়নি, যা রোগর সম্ভাবনা বেশি করে তুলতে পারে। কিন্তু যদি কারও আগে থেকেই স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis) নামক রোগ থাকে, তাহলে তাদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

⏩ আরও পড়ুন: গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা কি ক্ষতিকারক?

এই রোগটিতে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই আক্রান্ত হতে পারে! তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি একটু বেশি দেখা যায়। মানুষ মনে করত যে শুধুমাত্র বয়স্ক মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে, কিন্তু এখন আমরা জানি যে এটি যে কেউ, এমনকি দশ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদেরও হতে পারে। ঠিক কত জনের এই রোগ আছে তা জানা না গেলেও কিন্তু একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রায় ১৬ শতাংশ কলেজ ছাত্রদের মধ্যে এক্সপ্লোডিং হেড সিন্ড্রম পাওয়া গেছে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা বলতে একজন ডাক্তার বা নার্স যে কাজগুলো করে একজন অসুস্থ বা আহত হলে তাকে ভালো হতে সাহায্য করে। এতে ওষুধ খাওয়া, বিশেষ যত্ন নেওয়া বা ব্যক্তিকে ভালো করে তোলার জন্য ব্যায়াম করার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কারও এই নির্দিষ্ট অসুস্থতা বা রোগ আছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য ডাক্তারদের ল্যাবে পরীক্ষা করার উপায় নেই। যদি তিনটি বিষয় থাকে, যেমন- একজন ব্যক্তি তার মাথায় বিকট শব্দের কারণে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠে কিন্তু কোনো ব্যথা ছাড়া এবং রোগী সত্যিই আতংকিত বোধ করে, তাহলে ডাক্তার মনে করতে পারেন তাদের এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম বলে কিছু আছে। ব্যক্তিকে ভালো বোধ করতে সাহায্য করার জন্য, ডাক্তার তাদের সাথে কথা বলতে পারেন এবং উদ্বেগ দূর করতে তাদের ওষুধ দিতে পারেন। আস্তে আস্তে রোগীরা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।


প্রিয় পাঠক, এই ছিল— এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম নামের অদ্ভুত রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

3 thoughts on “এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম : অদ্ভুত একটি মাথার রোগ!”

  1. এই রোগের কথা আগেও শুনেছিলাম কিন্তু বিস্তারিত জানতাম না। আজকে জানলাম।

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top