কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI আজকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয়গুলোর একটি। আজকের পৃথিবীকে বলা হয় প্রযুক্তির পৃথিবী। আধুনিক পৃথিবীকে এই সময়ে সহজতর করেছে প্রযুক্তিগত উন্নতি। গত একশো থেকে দেড়শো বছরে পৃথিবী দেখেছে অসংখ্য মানব কল্যাণকর প্রযুক্তির, যাদের ছোঁয়ায় মানুষের জীবন হয়েছে আরও সহজ, গতিশীল। যাদের মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম! চলুন আজ জেনে নিই— কম্পিউটার তৈরি থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির গল্প!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা যাতে মেশিন দ্বারা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শিত হয়। এটি এমন একটি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রাম যা যেকোনো কমান্ডের ভিত্তিতে নিজস্ব প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করতে পারে এমনকি পরিস্থিতি বুঝে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

⏩ আরও পড়ুন: জাদুকরী ৫টি ঔষধি গাছ!

AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে চর্চিত বিষয় হলো?

AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চর্চা আজ থেকে নয়, বরং বহু আগে থেকেই হয়ে আসছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিত্রশক্তি নাৎসি বাহিনীর গোপন মেসেজ ডিকোড করতে পারছিল না কোনোভাবেই। সে সময়ই প্রথম এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবনের কথা ভাবা হয় যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেকোনো কোডেড মেসেজ ডিকোড করতে পারবে। মূলত এই ধারণার হাত ধরেই, অ্যালান টুরিংয়ের হাত ধরে একটি যন্ত্র আবিষ্কার হয় যা নিমিষেই যেকোনো হিসেব করে ফেলতে পারত। তবে তা তৈরি করা ছিল বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ ও খরচের ব্যাপার। অথচ আজকের দিনে আপনার পকেটে থাকা স্মার্টফোনেই আপনি পেয়ে যাবেন ক্যালকুলেটর! যাই হোক, অ্যালান টুরিংয়ের বানানো সেই গণনাযন্ত্রের হাত ধরেই পরবর্তীতে আধুনিক কম্পিউটারের জন্ম হয়েছিল! আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে ঠিক তখন থেকেই।

ইতিহাস বদলে দেওয়া একটি দিন কিংবা ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো বিপর্যয়!

১৯৯৭ সালের ১১ জুন। আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো করেই শুরু হয়েছিল দিনটা। কিন্তু এই দিনেই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার শক্তি প্রদর্শন করে। মানুষ অবাক হয়ে দেখে মানুষেরই তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে হেরে বসে আছে একজন মানুষ! হ্যাঁ, বলছিলাম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু গ্যারি ক্যাসপারভের কথা। এই দিনে তিনি বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সুপার কম্পিউটার ডিপ ব্লুর কাছে দাবা খেলায় হেরে যান। পৃথিবীর মানুষ সাক্ষী হয় এক অদ্ভুত পরাজয়ের! আর সেই থেকেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই মানুষের উপকারে আসবে না-কি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে!

⏩ আরও পড়ুন: বিদেশে চাকরি পাওয়ার উপায়!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যত বাড়ছে ততই বেড়ে চলেছে একটি প্রশ্ন করার হার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আসলেই মানবজাতির কল্যাণের জন্য তৈরি হয়েছে নাকি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই বুমেরাং হয়ে মানবজাতির ধ্বংস ডেকে আনবে!

এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা নিজেই। যারা AI নিয়ে কাজ করছেন তারা সবাই বলছেন AI নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কারণ AI কে দিনশেষে মানুষই নিয়ন্ত্রণ করে। তবে হ্যাঁ, আজকাল যে মানুষের অনেক কাজই চোখের পলকে AI করে দিচ্ছে তাতে কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই। এই যেমন আপনার হাতে থাকা ফোনটি যদি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সাহায্য জীবনে অন্তত একবার হলেও নিয়েছেন। এই গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কিন্তু AI নিয়ন্ত্রিত একটি সফটওয়্যার যাতে আপনি কমান্ড দিলেই আপনার ফোনের যেকোনো কাজ করে দেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এছাড়াও গাড়ি চালানো, ছবি আঁকা, অফিসের সমস্ত কাজ, কন্টেন্ট লেখা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ অনেক কাজই করে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসাথে দেখা দিচ্ছে বেকারত্বের শঙ্কা। তবে আপনি যদি একজন দক্ষ কর্মী হয়ে থাকেন, তবে চিন্তার কিছু নেই। আপনার দক্ষতাই আপনার কাজকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষকে অলস বানিয়ে দেবে?

এআই এর যথেচ্ছ ব্যবহার এবং চ্যাটজিপিটির ক্রমশ উন্নতির ফলে আমাদের অনেক দৈনন্দিন কাজ সহজ হয়ে গেছে। আগে গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন ঘেঁটে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর বের করতে হতো। এখন চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করলে কয়েক সেকেন্ডেই তা বেশ গোছানো উত্তর নিয়ে হাজির হয়। শুধু কি তাই? ধরুন আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়ে ভেবে ভেবে বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ, কন্টেন্ট তৈরি করতে হতো। এখন AI কে কমান্ড দিলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই তা বানিয়ে দিচ্ছে। এমনকি AI দিয়ে আস্ত একটি ওয়েবসাইট পর্যন্ত বানিয়ে ফেলা সম্ভব! তাই বলে কিন্তু মানুষ অলস হয়ে যাবে এমন অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। এখনো অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেসব কাজ AI সুচারুভাবে করতে পারে না। সেসব কাজ এখনো মানুষকেই করতে হয়। কাজেই আমরা বলতে পারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে মানুষের জীবন হবে আগের চেয়ে তুলনামূলক সহজ। কিন্তু তা কোনোভাবেই অলসতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।

⏩ আরও পড়ুন: ক্যারিয়ারের শুরুতে যে ভুলগুলো করবেন না!

শেষ কথা:

আগে আমরা বুদ্ধিমত্তা বলতে বুঝতাম মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে। এখন এই নিউরন কোষের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের তৈরি মাইক্রোচিপে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মতোই চিন্তা করতে পারে এবং তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যত দিন যাবে তত বেশি মানুষ AI এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন মানুষের দৈনন্দিন প্রায় সব কাজ নিয়ন্ত্রিত হবে AI এর মাধ্যমে!

********* 

যাই হোক, প্রিয় পাঠক, এই ছিল— কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত গল্প! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top