কোয়েল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত!

কোয়েল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত!

বর্তমানে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। হাঁস-মুরগির পরিপূরক হিসেবে কোয়েল পাখি বেশ জনপ্রিয়। এই পাখিটির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং ডিমও খুব উপাদেয়। ফলে এটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বেশ ভালোভাবে মেটায়। মাত্র ৬ সপ্তাহে বা ৪২ দিনে কোয়েল পাখি ডিম এবং মাংস প্রদানের জন্য দৈহিকভাবে উপযোগী হয়। স্বল্প জায়গা ও স্বল্প পুঁজিতে কোয়েল পালন করা যায়। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ১টি মুরগির জায়গায় ৮টি কোয়েল পালন করা সম্ভব। ফলে প্রান্তিক চাষীদের কিংবা যারা শখের বসে খামার করে, তাদের কাছে কোয়েল পালনও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আমরা— কোয়েল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত সমস্ত তথ্য জানব। চলুন শুরু করা যাক।

কোয়েল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত

কোয়েল নির্বাচন

ফারাও, ইংলিশ হোয়াই, ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন, ব্রিটিশ রেঞ্জ জাতের কোয়েল সবচেয়ে বেশি ডিম দেয়। আর আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল ও ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল মাংসের জন্য অধিক প্রসিদ্ধ। সবচেয়ে ভালো হলো— জাপানিজ কোয়েল পাখি পালন করা। এটি ডিম এবং মাংস উভয়ই ভালো দেয়।

আবাসন

বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালন করার পূর্বশর্ত হলো— কোয়েলের আবাসন ঠিকঠাক মতো হওয়া।

কোয়েল পাখি অবশ্যই খাঁচায় লালন-পালন করতে হবে। অনেকে লিটার পদ্ধতিতে মুরগির মতো কোয়েল পালনের কথা বলে থাকে। এভাবে কোয়েল পালন করলে কোয়েলের ক্ষত সৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহঃ জনিত রোগ বা Ulcerative enteritis হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই মোটামুটি আলো-বাতাস যুক্ত স্থানে খাঁচায় কোয়েল পালন করাই শ্রেয়।

৫০টি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েলের জন্য (১২০×৬০×৩০) সে.মি. মাপের খাঁচা প্রয়োজন। ডিম-পাড়া এক জোড়া কোয়েলের জন্য ৫”×৮” মাপের খাঁচা লাগে।

তাছাড়া লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করলে আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। যেমন— পাখি উড়ে গিয়ে ডিমের ওপর পরে এবং ডিম ভেঙে যায়। অনেক কোয়েল পাখি একসাথে থাকার কারণে লিটার শতভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি ব্যহত হয়। এতে করে ফাঙ্গাস জন্মায় এবং কোয়েল পাখি প্রায় সময় তা খেয়ে নেয়। এতে কোয়েল মারা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

আর খাঁচায় কোয়েল পালন করলে তা অবশ্যই উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের বিষয়টা লক্ষ্য রাখতে হবে।

⏩ আরও পড়ুন: ছাগল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত!

কোয়েল পাখির খাবার

কোয়েল পাখির খাবারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, কোয়েল পাখিকে মুরগির খাবার দিলেই হবে। কিন্তু ধারণাটি ভুল! মুরগির খাবার কোয়েলকে দিলে কোয়েলের দৈহিক বৃদ্ধি ও ডিম উৎপাদন কমে যাবে। এর প্রধান কারণ হলো— কোয়েল পাখির খাদ্যে আমিষের পরিমাণ মুরগির খাবারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কোয়েল পাখির খাদ্যে ৪০-৪৫% দানাদার সামগ্রী থাকতে হবে। ২৩-২৫% আমিষ এবং ২৫৫০-২৮০০ কিলো-ক্যালোরী/কেজি , পরিমাপ হতে হবে এ অনুপাতে। কোয়েল পাখির খাদ্যে অধিক আমিষ-সমৃদ্ধ শুটকি মাছের গুঁড়া এবং বাণিজ্যিক প্রোটিন কনসেনট্রেট ফিডার মিল পরিমিত মাত্রায় মেশাতে হবে। 

কোয়েল পাখি যে পরিমাণ খাবার খায়, তার দুই থেকে তিনগুণ বেশি পানি পান করে। তাই পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, অবশ্যই খাবারের পাত্র এবং স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

প্রজনন

৩টি স্ত্রী কোয়েল পাখির সাথে ১টি পুরুষ কোয়েল পাখি রাখলে ডিম উৎপাদন এবং ডিমের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের আবাহওয়ায় কোয়েল ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে। এটি চলতে থাকে ৮-১২ মাস অবধি। প্রথম বছর কোয়েল সবচেয়ে বেশি ডিম দেয়। পরের বছর তা শতকরা ৪৬-৪৮ ভাগে নেমে আসে। এসময় কোয়েলের যত্ন বেশি নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে খাবারের বিষয়টা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম পাড়া শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহের ডিম ফুটাতে বসানো যাবে না।

কোয়েল পালন সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য

  • কোয়েল পালনে সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো এর রোগ-বালাই কম এবং উৎপাদন খরচ কম।
  • কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে প্রথমে গ্লুকোজ পানি ও পরে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যের সাথে পরপর ৩ দিন পর্যন্ত গ্লুকোজ ও ভিটামিন দিতে হবে।
  • কোয়েলের সবচেয়ে বড়ো শত্রু ইঁদুর। তাই কোয়েল পাখির খামারকে ইঁদুর মুক্ত রাখতে হবে।
  • যেকোনো ধরনের ফ্লু এসে হঠাৎ কোয়েল পাখির মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই, খামারকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের উপকারিতা

  • কোয়েলের মাংসে কোলেস্টেরল ১.৪% যেখানে মুরগির মাংসে ৪%। তাই এটির কারণে হৃদরোগ হয় না বললেই চলে।
  • এছাড়া কোয়েলের মাংসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২। ফলে কোয়েল পাখি— গোরু, ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির আদর্শ বিকল্প!
  • ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে কোয়েলের ডিম ও মাংস খেতে পারেন।
  • উচ্চ রক্ত চাপ, বাত রোগ, হাঁপানি এবং ডায়েবেটিস রোগ নিরাময়ে কোয়েলের ডিম জাদুর মতো কাজ করে।

**********

তো প্রিয় পাঠক, আশা করছি— কোয়েল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার যেকোনো ধরনের প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ডেইলি লাইভ এর সাথে থাকুন সবসময়। শুভকামনা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top