সামনে আসছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। বাঙালি মুসলিমদের ঘরে ঘরে ইফতারের প্লেটে যে ফলটির দেখা অবশ্যই মিলবে, সেটি হলো খেজুর। কেবল যে মুসলিমদের মধ্যে খেজুর অধিক জনপ্রিয় তা নয়, এটি অন্যান্য ধর্মের মানুষদের কাছেও এর সুস্বাদু স্বাদের জন্য বেশ পরিচিত। খেজুর স্বাদে যেমন মিষ্টি, ঠিক তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। আমরা খেজুর ঠিকই খাই, তবে এর সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকেরই জানা নেই। তো, ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব— খেজুর কী, খেজুরের ব্যবহার, খেজুরের পুষ্টি উপাদান এবং খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন শুরু করা যাক।
খেজুরের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুর:
খেজুর বা Date Plam হলো তালজাতীয় গাছের ডিম্বাকৃতির সুমিষ্ট একটি ফল। এটি Liliopsida শ্রেণির Arecales বর্গের Arecaceae পরিবার ও Phoenix গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। খেজুরের আদি বাসস্থানের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, এটি পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে চাষ করা শুরু হয়। খেজুর মরু অঞ্চলে ভালো জন্মে, তবে গ্রীষ্মপ্রধান দেশেও কিছু কিছু অঞ্চলে বর্তমানে খেজুর চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে পাওয়া দেশি খেজুর গাছের ফলের মান খুব একটা ভালো নয়। তাই, অনেকেই আরব দেশ থেকে বীজ সংগ্রহ করে খেজুরের চাষ করছেন। তবে এখনো বাজারে পাওয়া খেজুর আরব দেশগুলো থেকেই আমদানি করা হয়। খেজুর কাঁচা অবস্থায় হলুদ রঙয়ের হয় এবং পাকলে লাল হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়- আজোয়া, খুরমা, শুকনো, ভেজা, ইত্যাদি।
খেজুরের পুষ্টি উপাদান:
খেজুর হলো খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। ১০০ গ্রাম খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রায় ২৩০ কিলো ক্যালরি। এটিতে রয়েছে শর্করা, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন (বিটা ক্যারটিন, লুটিন জিয়াক্সানথিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ফোলেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ইত্যাদি), ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, আয়রন, পটাসিয়াম, জিংক, জল, ইত্যাদি। খেজুরে প্রায় ৮০% চিনি থাকে, তাই একে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
খেজুরের ব্যবহার:
খেজুর কেবল ফল হিসাবে কাঁচা পাকা খাওয়া হয় তা নয়। খেজুর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সনাতনী নিয়মে সিরকা বা ভিনেগার তৈরি করা হয়। এই মধ্যপ্রাচ্যে খেজুরকে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে সেখানকার মানুষ। এছাড়াও খেজুর দিয়ে বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরি করা হয়। কচি খেজুর পাতা সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। অন্যদিকে, গাছ কেটে খেজুরের রস তৈরি করা হয়। এই রস থেকে গুঁড় হয়। যা দিয়ে নানা পদ তৈরি করা হয়।
এতক্ষণ আমরা জানলাম- খেজুর কী, খেজুরের পুষ্টি উপাদান ও ব্যবহার সম্পর্কে। এই পর্যায়ে আমরা জানবো, খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
খেজুরের উপকারিতা:
১। নিয়মিত খেজুর খেলে আমাদের রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা কমে। কারণ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, আর আয়রন হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমায়।
২। খেজুর আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কারণ এতে উপস্থিত রয়েছে পটাসিয়াম। বিপি বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমাদের হার্ট অ্যাটাকের বা হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে, এবং কোলেস্টেরল সমস্যা হতে রেহাই মেলে।
৩| খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যা দূর করতেও ওস্তাদ। কেন না, খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে ফাইবার, যা আমাদের শরীরে খুব সহজেই দ্রবীভূত হয়। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে অনেক ধরনের পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৪| খেজুর চোখ ভালো রাখে। কারণ খেজুরে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন এ। আর আমরা জানি, আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে ভিটামিন এ এর জুড়ি নেই। তাই, যাদের চোখের সমস্যা তারা নিয়মিত খেজুর খেলে চোখ সুস্থ হবে।
৫| খেজুর আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় ও পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। কারণ খেজুরে রয়েছে উচ্চ ক্যালরি, বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এতে থাকা সুক্রোজ, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ মূলত আমাদের শরীরে এ শক্তি প্রদান করে।
৬| খেজুর আমাদের হাঁড় সুস্থ রাখে। কারণ খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে ক্যালসিয়াম।
৭। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে নবাগত শিশুর বিভিন্ন জন্মগত রোগের ঝুঁকি কমে।
৮। যাদের স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন কম, তারা নিয়মিত খেজুর খেলে খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে। কারণ খেজুরে উপস্থিত রয়েছে চিনি, ভিটামিন এবং আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘প্রোটিন’।
৯। খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরে সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে বেশ সহাযক। আর এই সেরোটোনিন হরমোনই আমাদের মানসিক প্রফুল্লতা দেয় এবং মন ভালো রাখে।
১০। এছাড়াও খেজুর তারুণ্যতা ধরে রাখতে বেশ সহায়ক, এটি বিভিন্ন সংক্রমক রোগের প্রতিশোধক হিসবেও কাজ করে (যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর, ইত্যাদি)। কেবল তাই নয়, এটি আমাদের যকৃত সুস্থ রাখতেও বেশ সহায়ক।
⏩ আরও পড়ুন: কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!
খেজুরের অপকারিতা:
আমরা ওপরে খেজুরের নানাবিদ উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, খেজুরের এত এত উপকারিতার বিপরীতে বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য যতটুকু যে উপাদান প্রয়োজন তার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা বিপদ বয়ে আনে। ঠিক তেমনই খেজুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। কারণ-
১। অতিরিক্ত খেজুর খেলে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাবে। কারণ আমরা জানি, খেজুরে থাকে উচ্চ মাত্রার সুগার বা চিনি। আর এই সুগার বা চিনি ডায়াবেটিসের জন্য হুমকিসরূপ।
২। খেজুরে যেহেতু চিনি, ভিটামিন ও প্রোটিন থাকে, তাই যারা ইতোমধ্যেই মোটা বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন; তারা খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। অতিরিক্ত খেজুর খেলে তা পেটে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা, বদহজম, ইত্যাদি।
৪। অতিরিক্ত খেজুর খেলে অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫। পটাসিয়ামের মাত্রা ইতোমধ্যেই যাদের শরীরে বেশি, তাদের ক্ষেত্রে খেজুর বিষের মতো। তাই খেজুর খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
*********
যাই হোক, প্রিয় পাঠক, এই ছিল— খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।
উপকারী পোস্ট।
এখন থেকে রেগুলার খেজুর খাব।
আমাদের নবীজি এই খেঁজুরের উপকারিতা বা রহমত সম্পর্কে অনেক আগেই বলেছিল। তবুও, অনেক উপকারিতা ও অপকারিতা অজানা ছিল। এখন জেনে খুব ভালো লাগলো। এই রমজানে খেঁজুর দিয়ে ইফতার করি। আলহামদুলিল্লাহ।