সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের চুলা ব্যবহার বন্ধ নিয়ে একটি গুঞ্জন ছড়িয়েচে যা আমাদের সবারই জানা। গ্যাসের চুলা হতে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এমন তথ্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা শোনা যায়। আমেরিকান একটি গবেষণা পত্রে, গ্যাসের চুলা ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে এবং এর থেকে রেহাই পাওয়ার সম্পর্কে গবেষকদের মতামত তুলে ধরা হয়েছিল। ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে প্রতিবেদনটির বিষয় বস্তু তুলে ধরা হলো। তো, আজকের পোস্টে আমরা— গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা কি ক্ষতিকারক; এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক।
গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা কি ক্ষতিকারক?
গ্যাসের চুলা হতে কোন কোন পদার্থ নির্গত হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
ক্ষতিকর বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য গ্যাসের চুলা হতে নির্গত জ্বালানী প্রাকৃতিক গ্যাসের দহনে তৈরি হয়। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড। এ গ্যাসের নির্গমন মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিধি-নিষেধ বাইরের পরিবেশে থাকলেও বাসা-বাড়িতে এমন কোনো বিধি-নিষেধ নেই। গবেষণার তথ্যমতে, ঘরে হোক কিংবা বাইরে উভয় পরিবেশের নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড স্বাস্থ্যের জন্য সমান বিপদজনক।
এমনকি মাঝে মধ্যে গ্যাসের চুলা হতে কিংবা সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে অদহনকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস র্নিগত হতে পারে যাতে বেনজিনের মতো কান্সার সৃষ্টিকারী গ্যাসও থাকে। এছাড়া শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী ২.৫ মাইক্রন থেকে ক্ষুদ্র বিভিন্ন সূক্ষ কণাও তৈরি হতে পারে।
⏩ আরও পড়ুন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ!
নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ফলে স্বাস্থ্যের কী কী ক্ষতি হতে পারে?
১৯৯২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গ্যাসের চুলা হতে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এর ফলে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাধি হওয়ার হার প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যায়। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানিরা আরও খুঁজে পান যে, গ্যাসের চুলায় রান্না করা খাবার খেয়ে শিশুদের অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সম্প্রতি ২০২২ সালের আরও একটি গবেষণায় দেখা যায়, গ্যাসের চুলায় রান্না করা খাবার খাওয়া যুক্তরাষ্ট্রে ১২.৭ ভাগ শিশুদের অ্যাজমার ক্ষেত্রে দায়ী হয়। এর ফলেই যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের চুলা বন্ধের গুঞ্জন শোনা যায়।
পরে, আমেরিকান গ্যাস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি গ্রুপ গবেষণার ফলাফলের সাথে একমত পোষণ করে এবং বলে যে গবেষণার জন্য শিশুদের গ্যাসের চুলার ধোঁয়ায় সরাসরি প্রকাশ করা ঠিক নয়। সুতরাং, বাচ্চাদের এবং গ্যাসের চুলা সম্পর্কে বেশিরভাগ গবেষণাই কেবল কী ঘটতে দেখে এবং পর্যবেক্ষণ করে। এর মানে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, গ্যাসের চুলার ধোঁয়া হাঁপানি সৃষ্টি করে, তবে আমরা বলতে পারি যে এটি কারও হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাসের চুলার আশেপাশে থাকেন তবে এটি আপনার ফুসফুসের সমস্যা এবং এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গ্যাসের চুলা কি একই ভাবে বাচ্চাদের ও প্রাপ্তবয়স্কদের উভয়কেই প্রভাবিত করে?
বেশিরভাগ গবেষণায় গ্যাস স্টোভগুলি কীভাবে বাচ্চাদের প্রভাবিত করে তা দেখেছে, তবে এগুলো কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে কিছু গবেষণা রয়েছে। সাধারণত মহিলারা রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহার করেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে মহিলারা শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
চুলা হতে গ্যাস নির্গমনের ফলে পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে?
যখন আমরা গ্যাসের চুলা ব্যবহার করি, তখন এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে, যে গ্যাস পৃথিবীকে আরও গরম করে তুলতে পারে। কিন্তু মিথেন নামে আরেকটি গ্যাস আছে, যা চুলা থেকে ফুটো হয়ে বাতাসে যেতে পারে। এই মিথেন গ্যাস মানুষকে সরাসরি আঘাত করে না, তবে এটি বাতাসে থাকতে পারে এবং পৃথিবীকে আরও গরম করে তুলতে পারে। এটা অনেকটা রাস্তায় গাড়ি থাকার মতো, সবগুলোই বাতাসকে আরও গরম করে তুলছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তারা জানিয়েছেন যে, কেবল একটি গ্যাস নয় যা এটি ঘটায়, অন্যান্য জিনিসও দায়ী।
⏩ আরও পড়ুন: পানির উপকারিতা ও অপকারিতা!
গ্যাস দ্বারা চালিত অন্যান্য যন্ত্রপাতির কারণে কেমন ক্ষতি হতে পারে?
অন্যান্য গ্যাস-চালিত যন্ত্রপাতি; যেমন- ওয়াটার হিটার, ফার্নেস এবং ড্রায়ারগুলিও গ্যাসের চুলার মতো ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত করতে পারে। এই গ্যাসগুলি পরিবেশের জন্য খারাপ, যদিও আমরা সাধারণত রান্না না করলে সেগুলি লক্ষ্য করি না। কিন্তু আমরা এর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এটি ঘটতে বাধা দিতে পারি।
কীভাবে গ্যাসের চুলা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত?
এই মুহূর্তে, গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না করা গেলেও, তবে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। ক্ষতিকারক ধোঁয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখতে গ্যাসের চুলা এবং চিমনি একসাথে বিক্রি করা একটি নিয়ম হতে পারে। নিউ ইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু শহর ইতিমধ্যেই নতুন বাড়িতে গ্যাসের চুলা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানোর জন্য আইন তৈরি করেছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে কীভাবে গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা যেতে পারে?
আপনার যদি গ্যাসের চুলা থাকে তবে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় তা নিশ্চিত করতে আপনি কিছু জিনিস করতে পারেন। একটি বিকল্প হলো, এর পরিবর্তে একটি বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করা, যা ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি নির্গত করে না। তবে আপনি যদি আপনার গ্যাসের চুলা ব্যবহার চালিয়ে যেতে চান তবে ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ ফ্যান বা চিমনি ব্যবহার করে আপনি এটিকে নিরাপদ করতে পারেন। আপনি রান্না করার সময় আপনার রান্নাঘরের জানালাও খুলতে পারেন যাতে আপনি ক্ষতিকারক গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
⏩ আরও পড়ুন: মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী!
*********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা কি ক্ষতিকারক; এই সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।
নতুন অনেক তথ্য জানলাম। গ্যাসের চুলা ইউজ করা কমাতে হবে দেখছি…!
অবুক! জানতাম না গ্যাসের চুলা ব্যবহারের এতো ঝুঁকি। সত্যিই খুব উপকার হলো। এখন থেকে দেখছি গ্যাসের চুলা ইউজ করা কমিয়ে দিতে হবে। ধন্যবাদ আপা।