ছাগল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত জানলে মাসে লাখ দুয়েক টাকা অনায়াসেই উপার্জন করা যায়। গৃহপালিত নিরীহ এই প্রাণীটিকে বলা হয় গরিবের গাভী। আমাদের দেশের অনেক গরিব মানুষ ছাগল পালন করে তাদের অভাব গুছিয়েছেন। বর্তমানে লাভজনক ব্যবসাগুলোর মধ্যে ছাগল পালন অন্যতম।এজন্য আপনার ছাগল পালন পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। শুধু লাভ দেখে আর টাকা থাকলেই ছাগল পালন শুরু করবেন না। আধুনিক ছাগল পালন পদ্ধতি সঠিকভাবে না জেনে শুরু করলে বড়ো ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তো, প্রিয় পাঠক, ডেইলি লাইভের আজকের আর্টিকেলে আসুন তাহলে জানি— ছাগল পালন সম্পর্কে বিস্তারিত বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ।
ছাগল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত
নির্বাচন করুন সঠিক ছাগল:
ছাগল পালন করে লাভবান হতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে নির্বাচন করতে হবে ছাগলের সঠিক জাত। বাংলাদেশে যমুনা পাড়ি এবং ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বেশি পাওয়া যায়। দুটোই বেশ ভালো জাতের। ছাগলের আরও কয়েকটি উন্নত জাত হলো—
- কিকো
- সেনিন
- লা মাঞ্চা
⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া!
পুরুষ ছাগল ক্রয়ের ক্ষেত্রে যা মাথায় রাখবেন:
- বয়স: ১ বছর কিংবা ১.৫ বছর।
- গঠন: ছাগলের পেছনের অংশ তথা পাগুলো শক্তিশালী কিনা দেখে নেবেন। বার কয়েক মাথায় হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেখবেন। ছাগল শক্তিশালী হলে আপনাকে মাথা দিয়ে ধাক্কা দিতে চাইবে। যদি তা না করে যদি নির্জীব থাকে, তাহলে বুঝবেন ছাগল দুর্বল।
- বংশ: অবশ্যই ছাগল কোন জাতের নিচ্ছেন তা জেনে নেবেন। ভালো জাত হতে হবে। আকার সামান্য ছোটো হলেও সমস্যা নেই।
ছাগী ক্রয়ের ক্ষেত্রে যা মাথায় রাখবেন:
- বয়স: ৯-১২ মাসের মধ্যে।
- গঠন: পা, ওলান এবং পেছনের অংশ সুগঠিত কিনা পরখ করে নেবেন।
- বংশ: বড়ো ছাগলের বংশ নির্বাচন করবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, সুস্থ ছাগল ডাকাডাকি কম করে।
ছাগলের ঘর নির্বাচন:
- জায়গা হতে হবে উঁচু।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে ছাগল পালনের স্থান। স্যাঁতস্যাঁতে যেন না থাকে কোনোভাবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- দুইটি ছাগল পালনের জন্য ৫-৬ ফুট লম্বা এবং ১-২ ফুট চওড়া স্থান উত্তম।
- পয়ঃনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
- শুকনা এবং আলো বাতাসপূর্ণ জায়গা হতে হবে।
- একসাথে অনেকগুলো ছাগল পালন করলে, মাটি থেকে ১.৫ – ২ ফুট উঁচু করে, ছাগলের ঘর বানাতে হবে।
⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি অল্প পুঁজির বিজনেস আইডিয়া!
ছাগলের খাবার:
ঘাস এবং লতাপাতা ছাগলের প্রিয় খাদ্য। এর পাশাপশি ছাগলকে আপনার দিতে হবে আরও কিছু দানাদার এবং পুষ্টিকর খাবার। খাবারগুলো হলো— চাল ভাঙা, চালের কুঁড়ো, গমের ভুসি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়া, ডালের ভুসি, শামুক বা ঝিঁনুকের গুড়া এবং সামান্য লবণ।
বর্তমানে অনেক খামারি উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে খাওয়ায়। আপনার পর্যাপ্ত জমি থাকলে, সেখানে এসব ঘাস চাষ করে খাওয়াতে পারেন। এতে খাবারের খরচও কমবে, ছাগল ভালো পুষ্টিও পাবে। এধরনের ঘাস হলো— বাকসা ঘাস, নেপিয়ার ঘাস, পাকচং ঘাস, জার্মান ঘাস, ইত্যাদি।
উল্লেখিত খাবারগুলো আপনার ছাগলকে খাওয়ালে, ছাগল বাড়তি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। বেশি দুধ দেওয়ার জন্য ছাগীকেও এসব খাবার দিতে হবে।
ছাগলের যত্ন:
ছাগল পালন পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ছাগলের যথার্থ যত্ন নিতে জানা। আসুন বিষয়গুলো জেনে নিই—
- ছাগলকে সময়মত টিকা দিতে হবে পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে।
- ছাগলের ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার এবং শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রতিমাসে একবার আপনার ছাগলগুলোকে পশু চিকিৎসক দেখাবেন।
- ডায়রিয়া, গলাফুলা, PPR, কৃমি জাতীয় রোগ তখনই হবে, যদি আপনার ছাগলের থাকার জায়গা অপরিষ্কার এবং স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেবেন।
- অত্যাধিক ঠাণ্ডায় ছাগলের গায়ে রাতের দিকে পাটের বস্তা দেবেন আর গরম বেশি পড়লে ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কোনো ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়লে, সেটাকে অন্যান্য সুস্থ ছাগল থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে, যাতে রোগের সংক্রমণ না ঘটে। এরপর অসুস্থ ছাগলটিকে পশু হাসপাতালে কিংবা স্থানীয় পশু ডাক্তারকে (ভেটেনারি ডাক্তার) দেখিয়ে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাবেন।
⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি ২০০০ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া!
দুধ দোহন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত:
বাচ্চা প্রসবের দশ মাস পর্যন্ত একটি ছাগীর দুধ দোহন করা যায়। এসময় ছাগীকে ভালো ভালো খাবার দিতে হবে।
দুধ দোহনের জন্য আপনার কথা বলতে হবে পশু চিকিৎসকের সাথে। কারণ ছাগীর বয়স, আকার ও এটির অবস্থার কথা বিবেচনা করে দুধ দোহনের প্রক্রিয়াটি আপনাকে উনি জানাবেন। এমনিতে দিনে দুইবার দুধ দোহন করা যায় একটি ছাগী থেকে। সঠিকভাবে দুধ দোহন করলে আপনার ছাগল থাকবে সুস্থ এবং দুধও পাবেন পরিমানে বেশি।
*********
তো প্রিয় পাঠক, এই ছিল— ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য! আশা করি, আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার যেকোনো ধরনের প্রশ্ন কিংবা মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ডেইলি লাইভ এর সাথে থাকুন সবসময়। আপনার দিনটি শুভ হোক।
খামার করার শখ ছিল অনেক। তবে, ছাগল নিয়ে কীভাবে কী করা যায়, জানা ছিল না। এই আর্টিকেল থেকে অনেক তথ্য জানা গেল।