মৃ’ত্যু একটি অমোঘ সত্য। প্রত্যেক প্রাণীকেই এর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে কিছু কিছু মৃ’ত্যু রেখে যায় অসংখ্য প্রশ্ন ও রহস্য। রহস্যজনক এসব মৃ’ত্যুর তালিকায় রয়েছে বহু সফল তারকাদের নামও। যাদের মৃ’ত্যুর এত বছর পরেও তাদের মৃত্যুর আসল কারণ নিয়ে রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। এইসব তারকাদের প্রত্যেকেই তাদের খ্যাতি এবং সাফল্যের চূড়ায় ছিলেন, যখন তারা আকস্মিকভাবে মা’রা যান! তাদের অস্বাভাবিক মৃ’ত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানারকম রহস্যের জাল। আমরা হয়তো রহস্যময় এসব মৃ’ত্যুর পিছনের সম্পূর্ণ সত্যটি কখনই জানতে পারব না। তো চলুন, ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে জেনে নেওয়া যাক— ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় তারকাদের রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে।
পৃথিবীর ইতিহাসে জনপ্রিয় তারকাদের রহস্যজনক মৃত্যু
মাইকেল জ্যাকসন
সংগীতের জগতে পপ রাজা হিসাবে পরিচিত মাইকেল জ্যাকসনের ২৫ জুন, ২০০৯ সালে রহস্যজনক মৃ’ত্যু হয়। মৃ’ত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫০ বছর। জানা যায় তার মৃ’ত্যু হয়েছিল তীব্র প্রোপোফল এবং বেনজোডিয়াজেপাইন নেশার কারণে। যা তাকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড: কনরাড মারে দিয়েছিলেন। মৃ’ত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে এটি বলা হলেও, মাইকেল জ্যাকসনের মৃ’ত্যুকে ঘিরে অনেক রহস্যের জন্ম হয়েছিল। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হ’ত্যা করা হয়েছিল। আবার অনেকে মনে করে যে তিনি আসলে মারাই যাননি। তিনি নিজের মৃ’ত্যুর নাটক সাজিয়েছিলেন এবং আজও বেঁচে আছেন এই পৃথিবীতেই। মৃ’ত্যুর পর তার আশেপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনেক প্রশ্ন এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। আজও তার মৃ’ত্যু রহস্যের কোনো যৌক্তিক সমাধান পাওয়া যায়নি এবং ধারণা করা যায় আগামীতেও তার মৃ’ত্যু রহস্য নিয়ে প্রশ্ন ভক্তদের মাঝে থেকেই যাবে।
⏩ আরও পড়ুন: পছন্দের সিনেমা দেখার জন্য সেরা কয়েকটি ওয়েবসাইট!
মেরিলিন মনরো
হলিউডের সর্বকালের সেরা আইকনিক অভিনেত্রী ধরা হয় মেরিলিন মনরোকে, যার লাস্যময়ী রূপ ও হাসিতে মজেছে লাখ লাখ তরুণ। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে তার বাণিজ্যিক ধারার কাজগুলি তাকে এনে দেয় ভুবনজোড়া খ্যাতি। লাস্যময়ী মোহিনী এই নায়িকা ৫ আগস্ট, ১৯৬২ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মা’রা যান। তার মৃ’ত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে জানা যায়- তিনি বারবিটুরেট ওভারডোজের মাধ্যমে আত্মহ’ত্যা করেন। কিন্তু মাইকেল জ্যাকসনের মতোই তার মৃ’ত্যুকে ঘিরেও অনেক ষড়যন্ত্রের আভাস রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে তিনি আত্মহ’ত্যা করেননি, বরং তাকে হ’ত্যা করা হয়েছিল। তার মৃ’ত্যুর সঙ্গে কেনেডি পরিবারের যোগাযোগ খুব দৃঢ় বলেই অনেকে ধারণা করেন। মৃ’ত্যুর কারণ হিসেবে পুলিশি তদন্তে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহ’ত্যা বলা হলেও মনরোর স্বামী রবার্ট স্ল্যাটজারের দাবি ছিল কেনেডি পরিবারই তার মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সাথে তিনি রোমান্টিকভাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল বিধায় রাষ্ট্রীয় গোপন কোনোকিছু জেনে যাবার ফলে তাকে হ’ত্যা করা হতে পারে। হয়ত এজন্যই মনরোর মৃ’ত্যুর পর তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও কথিত সুইসাইড নোট সরিয়ে ফেলে সেগুলো হারিয়ে গেছে দাবি করা হয়েছিল। তার মৃ’ত্যুর কারণ যাই হোক না কেন, তা তার মৃ’ত্যুর অর্ধ শতাব্দী পার হলেও আজও জানা যায়নি। আজও তার মৃ’ত্যু নিয়ে ভক্তদের মনে প্রশ্নের আনাগোনা রয়ে গিয়েছে। মনরোর মর্মান্তিক পরিণতি ভক্তদের দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়েছে।
এলভিস প্রিসলি
এলভিস প্রিসলি, যাকে বলা হয় রক অ্যান্ড রোলের রাজা। মৃ’ত্যুর এত বছর পরেও যিনি সংগীতপ্রেমীদের কাছে আজও জনপ্রিয় একটি নাম। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট তিনি মা’রা যান। মাত্র ৪২ বছর বয়সে তার মৃ’ত্যু ঘটে। তার মৃ’ত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, তবে তার এই আকস্মিক মৃ’ত্যুকে স্বাভাবিক বলে মানতে পারেনি অনেকেই। তার এই মৃ’ত্যুকে ঘিরে অনেক গুজব এবং রহস্য ছড়িয়েছিল যার সমাধান আজও পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গুজবগুলির মধ্যে একটি হলো যে- প্রিসলি তার আকাশছোঁয়া খ্যাতির চাপ থেকে বাঁচতে এবং সবার থেকে দূরে নির্জনে একটি শান্ত জীবনযাপন করার জন্য তার নিজের মৃ’ত্যুর নাটক করেছিলেন, আসলে তিনি মা’রা যাননি। এই গুজবে বিশ্বাসী মানুষেরা প্রিসলির মৃ’ত্যুর পর তার বিভিন্ন গান থেকে গোপন সংকেত বের করতে থাকে, জীবিতাবস্থায় তার বলা বিভিন্ন কথাকে তার মৃ’ত্যুর নাটকের প্রতি ইঙ্গিতময় হিসেবে তুলে ধরতে থাকে। এছাড়াও অনেকে বিশ্বাস করেন যে প্রিসলির স্বাভাবিক মৃ’ত্যু হয়নি বরং তাকে হ’ত্যা করা হয়েছিল। তার হ’ত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অনেকে সন্দেহ করেছেন যে হয়ত বা কোনো মাফিয়া বা তার নিজের ডাক্তারই তাকে হ’ত্যা করেছেন। তার ডাক্তারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে যে হয়তো তিনিই এই তারকাকে অতিরিক্ত ওষুধ দিয়েছিলেন। তার মৃ’ত্যুর পর অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও, প্রিসলির মৃ’ত্যুর আসল কারণ নিয়ে বিতর্ক ও রহস্য রয়ে গিয়েছে এখনো।
⏩ আরও পড়ুন: ওয়েন্সডে অ্যাডামস: অ্যা জার্নি টু অ্যাডাল্টহুড!
শ্রীদেবী
শ্রীদেবী, নামটি শুনলেই একটি মিষ্টি মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী জীবদ্দশায় ভক্তদের উপহার দিয়েছেন বহু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র। এই কিংবদন্তী ভারতীয় অভিনেত্রী ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ সালে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মা’রা যান। তাকে দুবাইতে তার হোটেল রুমের বাথটবে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় এবং পরে চিকিৎসক তাকে মৃ’ত ঘোষণা করেন। তার মৃ’ত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ দুর্ঘটনাজনিত ডুবে যাওয়া হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলেও, তার এই আকস্মিক মৃ’ত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন এবং রহস্যের উত্থান হয়েছিল। বাস্তবে কেউ কীভাবে এত স্বল্প পরিমাণ পানিতে ডুবে মা’রা যেতে পারে এটি অনেকেই বিশ্বাসই করতে পারেননি। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এর সাথে তার স্বামী জড়িত ছিল, কারণ সেদিন হোটেল রুমে তার স্বামী ছাড়া আর কেউ ছিল না তার সাথে। আবার অনেকে বলে যে, তার মৃ’ত্যু তার কোনো অসুস্থতার কারণে বা ওষুধের ফলে হতে পারে, কারণ তার প্রায়ই মাথা ঘুরত এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতেন বলে জানা গেছে; যা তাকে তার এই অস্বাভাবিক মৃ’ত্যুর দিকে নিয়ে গেছে। এরপরও একটি আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তার এমন মৃ’ত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি।
দিব্যা ভারতী
দিব্যা ভারতী ছিলেন ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন উঠতি তারকা, যিনি তার ক্ষণস্থায়ী জীবনে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি ৫ এপ্রিল, ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মা’রা যান। তিনি মুম্বাইতে তার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন, এবং মৃ’ত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসাবে এটিই তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি আত্মহ’ত্যা করে থাকতে পারেন এমন সন্দেহও ছিল। তার এই আকস্মিক এবং মর্মান্তিক মৃ’ত্যুকে সেই সময় কেউই মেনে নিতে পারছিলেন না। কেউ কেউ ধারণা করেন যে তাকে ধাক্কা দিয়ে বারান্দা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সম্ভবত তার ঈর্ষান্বিত স্বামী বা তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নিয়ে অন্য কেউ এই কাজ করে থাকতে পারেন। তার মৃ’ত্যুর পর তদন্তে জানা যায় যে তিনি সেসময় তার ক্যারিয়ারের ভালো একটি পর্যায়ে ছিলেন, তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও নেতিবাচক কিছু জানা যায়নি বরং মৃ’ত্যুর আগে তিনি তার আসন্ন প্রকল্পগুলির জন্য অনেক ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে অভিষেক করেই তুমুল খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯১-১৯৯২ সালে ১৪টি চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি, যা বলিউডের ইতিহাসে আজও রেকর্ড হিসেবে রয়েছে। তার প্রতিটি সিনেমাই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। তাই তিনি হতাশা থেকে আত্মহ’ত্যা করতে পারেন এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। তার মৃ’ত্যুর অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও, তার মৃ’ত্যুকে ঘিরে রহস্য আজও রয়ে গিয়েছে।
সালমান শাহ
সালমান শাহ নামটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি নাম নিঃসন্দেহে। তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। নব্বই এর দশকের গোড়ার দিকে অভিনয় জগতে এসেই তুমুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে রহস্যজনক ভাবে এই তারকার পতন ঘটে। ক্ষণস্থায়ী জীবনে তার ক্যারিয়ারও ছিল বেশ ছোটো সময়ের। এর মধ্যেই তিনি আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান। মাত্র ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন সালমান শাহ এই পৃথিবীতে। ক্ষণজন্মা এই নায়ক মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে বিস্তৃত প্রভাব বিস্তার করেছিলেন চলচ্চিত্র জগতে! তখনও যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, মৃ’ত্যুর এত বছর পরও তেমনই মানুষের মনে উজ্জ্বল রয়েছেন তিনি। তার মতো এতটা মানুষের হৃদয়ে জায়গা নিতে নায়করাজ রাজ্জাকের পর আর কেউ পারেনি। এত স্বল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন, তবুও তিনি এতটা দ্যুতি ছড়াতে পেরেছিলেন যে তার অনুপস্থিতির এত বছর পরেও তা উত্তোরোত্তর বেড়েই চলেছে। তিনি যেন এলেন, জয় করলেন, চলে গেলেন! প্রবাদটা বুঝি তার জন্যই তৈরি হয়েছিল!
⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি হরর সিনেমা!
তার মৃ’ত্যুর কারণ হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহ’ত্যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তবে তিনি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহ’ত্যা করতে পারেন তা কেউ বিশ্বাস করেনি। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তাকে হ’ত্যা করা হয়েছে, সম্ভবত তার রাজনীতি বা তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কারণে তাকে হ’ত্যা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী সামিরার দিকেই সন্দেহের তির যায় সবার আগে। তিনি আত্মহ’ত্যা করেছেন বলা হলেও অনেকে বিশ্বাস করেন না, কারণ তার শরীরে বেশ কিছু শারীরিক আঘাত এবং ধ্বস্তাধস্তির লক্ষণ দেখা গেছিল।
সালমান শাহের আকস্মিক মৃ’ত্যু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এবং তার ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছিল। তিনি তার সুন্দর চেহারা, প্রতিভা এবং ক্যারিশমার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দেশের জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃ’ত্যু এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গণের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই বিবেচিত হয় আজও। জনপ্রিয় তারকাদের রহস্যজনক মৃত্যু লিস্টে উল্লেখিত সব তারকার মধ্যে তাই সালমান শাহ-কেই সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে বাংলাদেশি দর্শকরা!
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— পৃথিবীর ইতিহাসে জনপ্রিয় তারকাদের রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।
এরা সবাই ছিলেন নিজ নিজ জায়গায় পৃথিবীবিখ্যাত। অথচ তাদের কী করুণ মৃত্যু!
কি ভয়ংকর!!! কেশদাম দাঁড়িয়ে গেলো 😥😥