নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ?

নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ?

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো নখ। এটি মূলত আলফা-ক্যারোটিন প্রোটিন দিয়ে তৈরি। নখের মূল কাজ হলো এর নিচে থাকা ত্বককে সুরক্ষিত রাখা। আর আমাদের শরীরে বেশ কিছু রোগ হলে তা নখের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন রোগ পরীক্ষা করার সময় নখও দেখেন। নানা ধরনের রোগে নখের রং, আকৃতি-প্রকৃতি, ইত্যাদির পরিবর্তন হয়। আর নখের এই পরিবর্তনে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। আর নখের এই রকম একটি রোগ বা সমস্যা হলো সাদা গুটি বা মিল্ক স্পট। যেটাকে বাংলায় বলা হয় নখের ফুল। অনেকেই নখের এমন সাদা দাগ দেখে চিন্তায় পড়ে যান। তবে, নখের ফুল দেখে চিন্তিত হবার কারণ নেই, আবার প্রচলিত ধারণা অনুসারে এটাও ঠিক নয় যে, শুধু ক্যালসিয়াম এর অভাব হলে এমন হয়। সাধারণত চিকিৎসাবিজ্ঞানে নখের সাদা দাগ বা নখের ফুলের নাম Punctate Leukonychia৷ তো, অনেকেই আসলে সঠিকভাবে জানে না— নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ? এর পেছনে কিছু কারণ থাকে। ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আসুন কারণগুলো জেনে নিই—

নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ?

আঘাত / ম্যানিকিউর:

বেশিরভাগ সময়ে নখের ফুলের দাগ হয় আঘাতের কারণে। যেমন: দাঁত দিয়ে নখ কাটা, অনবরত নখ দিয়ে টেবিলে আঁচড়ানো অথবা আওয়াজ করা, নখ দিয়ে কৌটা খোলা, ইত্যাদি। এছাড়াও ম্যানিকিউর করার সময় এই রকমের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে ম্যানিকিউর করার সময় ধারালো সরঞ্জাম ব্যবহারে সর্তক না থাকলে, এরপর খুব ঘন ঘন ম্যানিকিউর করলে নখের ক্ষতি হয়। আবার, ম্যানিকিউরের জেল বা অ্যাক্রিলিক থেকে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন হিসেবে এই দাগ হতে পারে।

⏩ আরও পড়ুন: ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়!

ছত্রাকের সংক্রমণ:

নখের সাদা দাগ বা ফুলের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো ছত্রাকের সংক্রমণ। সাধারণত ছত্রাকের সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় উষ্ণ ও আদ্র পরিবেশে। আর জীবাণু পরিবেশ থেকে আমাদের নখ বা আশেপাশের ত্বকে ছোটো ফাটল দিয়ে প্রবেশ করে এবং এই সংক্রমণ নখ কাটার সরঞ্জাম থেকেও হতে পারে। এই ছত্রাক সংক্রামণের অন্যান্য লক্ষণসমূহ হলো— নখ ফাটা, মোটা হয়ে যাওয়া, হলুদ বা বাদামি রং ধারণ করা। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

খনিজের ঘাটতি:

নখ সাধারণত নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই পুষ্টির ঘাটতি হলে নখের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। যেমন: ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংকের মতো খনিজগুলোর অভাবে নখে সাদা দাগ পড়তে পারে। তবে এই নিয়ে নানা বিতর্ক অবশ্য আছে। খনিজের ঘাটতির অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো: শুষ্ক ত্বক, ভঙ্গুর নখ, পেশির ব্যথা, চুলপড়া, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, সাধারণ সর্দির মতো ঘন ঘন সংক্রমণ, ক্ষুধা কমে যাওয়া, ইত্যাদি।

কিছু ওষুধের প্রভাবে:

বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে যা আপনার নখের বেড়ে ওঠাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যার দরুণ নখে সাদা রেখা বা ফুল দেখা দিতে পারে। যেমন— ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপির ওষুধ, ব্রণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেটিনয়েড, সালফোনামাইডসহ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, লিথিয়াম, খিঁচুনি রোগের ওষুধ। এই ওষুধগুলোয় নখ পাতলা হয়ে ভঙ্গুরতার মতো সমস্যা হতে পারে।

ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া:

বেশ কিছু ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ার ফলেও এই নখের ফুল হতে পারে। তবে এটি একদম বিরল। যেমন: সাদা দাগ আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ার কারণেও হতে পারে। আর্সেনিক দূষিত খাবার / পানি দীর্ঘদিন সেবনে এ রকম হয়ে থাকে। আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফলে নখজুড়ে ‘মিউস লাইন’ নামে সাদা ব্যান্ড তৈরি হয়। এর সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা, তন্দ্রা, বিভ্রান্তি, ডায়রিয়া, বমি, হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, কালো ছোপ ছোপ দাগ।

বংশগত বা জেনেটিক কারণে:

বংশগতভাবেও এই রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে বংশগতভাবে পাওয়া কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য নখে সাদা দাগ হতে পারে। একে বলা হয় ‘টোটাল কনজেনিটাল হেরেডিটেরি নিউকোনাইকিয়া’

তবে, নখের ফুল অথবা কিছু জায়গায় সাদা দাগ সাধারণত খুব গুরুতর বিষয় নয়। এটা অধিকাংশ সময়ই আঘাতের কারণে হয়। কিন্তু আপনার নখটি যদি পুরো সাদা হয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া উচিত। একে বলা হয় লিউকোনাইকিয়া। এটি রক্তে প্রোটিনের স্বল্পতাকে নির্দেশ করে। লিভার, কিডনি বা হার্টের সমস্যায় এমন হয়।

⏩ আরও পড়ুন: কিটো ডায়েট মূলত কী?

তবে, চলুন এখন জেনে নিই, কীভাবে নখের যত্ন নেবেন—

নখের যত্ন

১| সব সময় চেষ্টা করুন আপনার প্রিয় নখ আর্দ্র রাখতে। যখনি হাত পা ধুবেন, তখন খুব ভালো করে পরিষ্কার করুন এবং খুব ভালো করে হাত পা শুকিয়ে নিন। এইজন্য ‘কিউটিকল অয়েল’ অত্যন্ত উপকারী।

২| যদি আপনার এমন কোনো বাজে অভ্যাস থাকে যে, দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো, শক্ত জায়গায় নখ আছড়ানো, তবে তা এখুনি পরিহার করুন।

৩| দীর্ঘদিন ধরে একই মোজা ব্যবহার বা অপরিষ্কার মোজা ব্যবহার। যা আমাদের নখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করুন কিংবা পরিষ্কার করে পরুন। বায়ু চলাচল করতে পারে এবং খুব টাইট নয়, এমন জুতা ব্যবহার করুন। নয়তো ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।

৪| সব সময় নখ কাটার সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখুন এবং ব্যবহার করুন। তাছাড়াও প্রত্যেকের আলাদা নেইল কাটার ব্যবহার করা উচিত।

৫| আপনার অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে নেইল পলিশ, আঠা ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও জেল কিংবা অ্যাক্রিলিক ম্যানিকিউর কিছুদিন বন্ধ রাখুন।

৬| আমাদের খাদ্যাভ্যাসও আমাদের নখের রোগের জন্য দায়ী। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, খনিজ, ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। এছাড়াও নিয়মিত মাছ, ডিম, চর্বিহীন মাংস, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খান।

********* 

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ; সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে ডেইলি লাইভ এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “নখের ফুল কোন রোগের লক্ষণ?”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top