ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা!

ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা!

এন্টারটেইনমেন্ট বা মনোরঞ্জনের অন্যতম প্রধান উপায় খেলাধুলা। আর খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল যে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য খেলার একটি, সেটা নিয়ে কারোরই সন্দেহ থাকার কথা না। প্রতি ৪ বছর পর পর ফুটবল বিশ্বকাপ হয়। আর এই বিশ্বকাপের বিভিন্ন আসরে বিভিন্ন মজার ঘটনা ঘটে। তো, আজ আমরা কথা বলব— ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা নিয়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ঘটনা।

ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা

এক.

১৯৩০ সাল। উরুগুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ। ফাইনালে খেলছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিবেশী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আর্জেন্টিনা এবং স্বাগতিক উরুগুয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই, সেকারণেই নিরাপত্তা নিয়েও ভীষণ রকমের চাপে আছে আয়োজকরা। ম্যাচ শুরুর আগে তাই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নামলেন দর্শকদের তল্লাশি করতে। আর তাতেই খুঁজে পাওয়া গেল ১৬০০ পিস্তল! প্রসঙ্গত, তখনো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে স্টেডিয়ামে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়নি। আর তারই সুযোগ নিয়েছিলেন দুই দলের সমর্থকরা। যদিও পরে আর সেসব ব্যবহারের সুযোগ মেলেনি তাদের।

দুই.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলমান। বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে সর্বশেষ দুইবার অর্থাৎ ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। এরপর ১৯৪২ সালে যুদ্ধের কারণে বিশ্বকাপের আয়োজন আর সম্ভব হয়নি। সেসময় বিশ্বকাপ ট্রফির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ইতালিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্তোরিনো বারসি। বিশ্বকাপ ট্রফিটি তিনি তখন নিজের বেডরুমের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। তার ভয় ছিল নাৎসি বাহিনী হয়তো ট্রফিটি চুরি করতে পারে।

⏩ আরও পড়ুন: টিকিটাকা : শুরুটা হয়েছিল যেভাবে!

তিন.

১৯৫০ সাল। বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে নান্দনিক ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। কিন্তু নানা কারণে সেবার বাছাই পর্ব থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় বাকি দলগুলো। আর তাতেই সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ চলে আসে ভারতের হাতে। কিন্তু অদ্ভুত এক কারণে সেবার বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তাদেরও। কী সেই কারণ?

ভারতের খেলোয়াড়েরা সেসময় অভ্যস্ত ছিল খালি পায়ে ফুটবল খেলতে। বিশ্বকাপেও তাই খালি পায়ের খেলার দাবি জানায় ভারত। কিন্তু ফিফা সেই অনুমতি দেয়নি তাদের। পরে বাধ্য হয়েই তাই নাম প্রত্যাহার করে নেয় ভারত।

চার.

১৯৫০ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ ছিল এখনকার বিশ্বকাপের চেয়ে একটু আলাদা। কোনো নক আউট ফাইনাল ছিল না তাতে। সেটার পরিবর্তে পরীক্ষামূলকভাবে রাউন্ড রবিন লীগ ভিত্তিতে টুর্নামেন্টজুড়ে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় সেবার। অনেকটা বর্তমান সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন দেশীয় ফুটবল লীগগুলোর মতো।

পাঁচ.

ফুটবলে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটির নাম ব্রাজিল। মোট পাঁচবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকার রেকর্ডটি কিন্তু তাদের হাতে নেই, সেই রেকর্ডটির মালিক ইতালি। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। সঙ্গত কারণেই আট বছর চ্যাম্পিয়ন থাকার কথা তাদের। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে পরের দুই বিশ্বকাপ আসর আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে। তাই মাঝখানের ১৬ বছর টানা চ্যাম্পিয়ন থাকার রেকর্ডটি দখলে চলে যায় ইতালির।

ছয়.

১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপে ছিল না ফিফার নিজস্ব কোনো বল। খেলা হতো দলগুলোর নিয়ে আসা বল দিয়ে। সেবার ফাইনালে ওঠা দুই দল, আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বল নিয়ে। দুই দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে মাঠে নামতে কিন্তু দুই বলে তো আর একসাথে খেলা সম্ভব না। বাধ্য হয়েই বিকল্প ভাবতে হয় রেফারির। শেষ পর্যন্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধের খেলা হবে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে আর দ্বিতীয়ার্ধে খেলা হবে উরুগুয়ের বলে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমার্ধে নিজেদের বল দিয়ে খেলে ২টি গোল করে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল নিয়ে মাঠে নেমে ৪টি গোল শোধ করে উরুগুয়ে। শেষে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে নেয় উরুগুয়ে।

⏩ আরও পড়ুন: অ্যাশেজ : শতাব্দী-প্রাচীন এক গৌরবময় সিরিজ!

সাত.

১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর একটি ছিল জায়ার। বিশ্বকাপ চলাকালীন একদিন পশ্চিম জার্মানি ছাড়ার জন্য একটি বিএমডব্লিউ বাস চুরি করে বসে টিমের সদস্যরা। তবে দুর্ভাগা জায়ার টিম বেশি দূর যেতে পারেনি বাসটি নিয়ে। জার্মানি ছাড়ার আগেই পুলিশের হাতে ধরে পড়ে যান তারা। পরে সেসব নিয়ে বেশ ঝামেলাও পোহাতে হয়েছিল দলটিকে।

আট.

একমাত্র দল হিসেবে কেবল ব্রাজিলই এখনো পর্যন্ত আয়োজিত সব কয়টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। সর্বোচ্চ পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও তারা। এছাড়াও দুইবার রানার্সআপ হয়েছে দলটি। এখনও পর্যন্ত ১১৮ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ৭৩ টি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটিও ব্রাজিলের। তবে দারুণ সফল এই দলটির বিশ্বকাপের শুরুটা কিন্তু মোটেও ভালো ছিল না। ১৯৩০ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে এই দলটি।

**********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ এর সাথে থাকুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top