বলিউড : বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প!

বলিউড : বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প!

ছোটোবেলা থেকে আমরা সবাই হিন্দি সিনেমা থেকে বড়ো হচ্ছি। অনেক হিন্দি মুভিই আমাদের অনেকের প্রিয়। এই হিন্দি মুভিগুলো আসে কিন্তু বলিউড ইন্ডাস্ট্রি থেকেই। বলিউড হলো ভারতের মুম্বাই ভিত্তিক হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র শিল্প, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও জনপ্রিয় শিল্প। কয়েক দশক ধরে এটি একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। বলিউড সিনেমা তার এনার্জেটিক গান এবং নাচের জন্য, এর রঙিন পোশাক এবং মেলোড্রামাটিক গল্পের জন্য বিশ্বে পরিচিত। বলিউডের সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং বিশ্ব চলচ্চিত্রের বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা তৈরির প্ল্যাটফরম হয়ে ওঠেছে। আজকের পোস্টে আমরা— এই বলিউড শিল্পের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। চলুন শুরু করি।

বলিউড : বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প

উত্থানের ইতিহাস

বলিউড শব্দটি নেওয়া হয়েছে হলিউড থেকে। সেসময় মুম্বাই শহর বোম্বে নামেই পরিচিত ছিল, বোম্বের ‘ব’ ও হলিউডের শেষ অংশের সাথে মিলিয়ে এই চলচ্চিত্র শিল্পের নাম রাখা হয় বলিউড। বলিউড তার যাত্রা শুরু করে ১৯১৩ সালে দাদাসাহেব ফালকের হাত ধরে। সেই বছরের ৩মে প্রথম ভারতীয় ছায়াছবি হিসেবে পরিচালক ও প্রযোজক দাদাসাহেব ফালকে’র ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ মুক্তি পায়। ছবিটি ছিল নির্বাক। ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় প্রথম স্ববাক চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’

সাফল্যের কারণ

বর্তমানে বলিউডের সাফল্যের অন্যতম একটি কারণ হলো— এর বিস্তৃত পরিসরের দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা। বলিউড ফিল্মে আমরা রোম্যান্স, অ্যাকশন, কমেডি ছাড়াও বিভিন্ন জনরার সিনেমা দেখতে পাই, যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় দর্শকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় বলা যায়। এছাড়াও বলিউডে রয়েছে অনেক সিনেমা যা পরিবারের সাথে বসে উপভোগ করার মতো বা পরিবার-বান্ধব, যা বলিউডকে বিস্তৃত পরিসরের দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

বলিউডের নাগাল কেবল ভারতের সীমানার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প ২০২২ সালের ভেতরেই $৩.৭ বিলিয়ন আকারের বাজারে পৌঁছানোর জন্য ৭.৪% চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। এই প্রবৃদ্ধি অনেকাংশেই বলিউডের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে বলা যায়। বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪ এ ধারণা করা যায়, বলিউডের মার্কেট সাইজ ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

⏩ আরও পড়ুন: অমিতাভ ও রেখা : এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি!

রপ্তানি শিল্প হয়ে ওঠা

বলিউড বর্তমানে ভারতের জন্য একটি প্রধান রপ্তানিকারক শিল্প হয়ে ওঠেছে। ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বলিউড চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে, বলিউডের চলচ্চিত্রগুলো নিয়মিতভাবে মূলধারার সিনেমার পাশাপাশি প্রদর্শিত হয় এবং অ-ভারতীয় দর্শকদের মধ্যেও এগুলো একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

দেশীয় বাজার ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে বলিউড চলচ্চিত্রের সাফল্য অর্জনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হলো— বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগে ভারতীয় সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং বিশ্বব্যাপী পপ সংস্কৃতিতে এর প্রভাব। ভারতের যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের জনপ্রিয়তা থেকে ভারতীয় রন্ধনপ্রণালী পর্যন্ত, ভারতীয় সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে বর্তমানে। বলিউড সিনেমার রঙিন ঝলমলে এবং গতিশীল দৃশ্য, আকর্ষণীয় গান এবং অনন্য গল্প বলার শৈলী একে অন্যান্য সিনেমাগুলো থেকে পৃথক করেছে বরাবরই।

আন্তর্জাতিক বাজারে বলিউডের সাফল্যের আরেকটি কারণ হলো— বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা। ভারতীয় প্রবাসী, যাদের সংখ্যা ১৭ মিলিয়নেরও বেশি, আন্তর্জাতিক বাজারে বলিউড চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা প্রচার ও টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তারা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।  অনেক অ-ভারতীয় দর্শকও ভারতীয় বংশোদ্ভূত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বলিউডের ছবির সাথে পরিচিত হয়েছেন।

এছাড়াও নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজন প্রাইমের মতো বৈশ্বিক স্ট্রিমিং পরিসেবাগুলির মাধ্যমেও বিশ্বজুড়ে দর্শকদের জন্য বলিউডের চলচ্চিত্রগুলি দেখা সহজ হয়েছে। তাই অনেক বলিউড চলচ্চিত্র এখন আন্তর্জাতিক দর্শকদের দিকে নজর রেখেও তৈরি করা হচ্ছে, চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের চলচ্চিত্রে বিশ্বব্যাপী চলমান থিম এবং কাহিনিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হলিউডের ও অন্যান্যদের সাথে যৌথ প্রযোজনা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, “দ্য লাঞ্চবক্স” এবং “স্লামডগ মিলিয়নেয়ার” (৮টি ক্যাটেগরিতে অস্কার প্রাপ্ত) এর মতো চলচ্চিত্রগুলি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং বক্স অফিসে সাফল্য লাভ করেছে। এগুলো ছাড়াও বলিউড, হলিউডের সাথে বেশ কয়েকটি যৌথ প্রকল্পেও কাজ করেছে, এখনো করছে। এছাড়াও বলিউড বর্তমানে চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথেও কাজ করছে, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য নতুন বাজার খুলেছে এবং বিশ্বজুড়ে নতুন দর্শকদের কাছে বলিউডকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

উপসংহার

তবে এত সাফল্যের পরও বলিউডের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা হলো ভারতীয় সিনেমাকে সারাবিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে গিয়ে এটি এর অনন্য সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য না হারিয়ে ফেলে। যদিও বলিউড বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে আবেদন তৈরি করতে সফল হয়েছে, তবে সেখানে একটি ঝুঁকি রয়েছে যে— এটি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে আন্তর্জাতিক দর্শকদের চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে তার স্বতন্ত্র পরিচয় হারাতে পারে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক বাজারে বলিউডের সাফল্য, ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীলতা এবং প্রতিভা প্রশংসনীয়। বলিউড যখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিকশিত হচ্ছে, এটি তার অনন্য সাংস্কৃতিক পরিচয় বজায় রেখে আন্তর্জাতিক দর্শকদের পরিবর্তিত রুচি ও পছন্দের সাথে খাপ খেতে পারে কী না তা একটি দেখার মতো বিষয়।

**********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— বলিউড : বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই। এধরনের পোস্ট আরও পড়তে চাইলে ডেইলি লাইভ এর সাথে থাকুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top