বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোত্তম বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য চার ধরনের খেতাব প্রদান করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। তারমধ্যে ৭ জন অকুতোভয় অসীম সাহসী বীর যোদ্ধাকে দেওয়া হয়েছিল বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব। সামরিক কিংবা আধা-সামরিক বাহিনীর এই সাতজন বীর দেশের তরে লড়াই করে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তাদের ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত এই অকুতোভয় অফিসার দেশের জন্য লড়াই করতে করতে প্রাণ দিয়েছিলেন। জাতির এই সূর্য সন্তান পাকিস্তানের মাটিতে, চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে শায়িত ছিলেন। ৩৫ বছর ধরে তাঁর কবরে লেখা ছিল– ‘ইধার সো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’ অর্থাৎ ‘এখানে শুয়ে আছে এক বিশ্বাসঘাতক’! আজ ২০ আগস্ট, এই মহান মুক্তিযোদ্ধার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রয়াণ দিবসে ডেইলি লাইভ এর পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা!
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
জন্ম:
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর, ঢাকাস্থ আগা সাদেক রোডের মোবারক লজে জন্মগ্রহণ করেন। [১] তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। তার বাবার নাম মৌলভী আবদুস সামাদ, মায়ের নাম সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ১১ ভাইবোনের মধ্যে মতিউর রহমান ছিলেন ষষ্ঠ।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন:
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকায়। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর চলে যান পাকিস্তানে। সারগোদায় অবস্থিত পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। মেধাবী ছাত্র মতিউর মেট্রিক পরীক্ষায় ডিস্টিংকশনসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের নাম উজ্জ্বল করেন। [২]
কর্মজীবন:
পাকিস্তান বিমান বাহিনী স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিমান বাহিনীতে যোগদানের কথা ভেবেছিলেন মতিউর। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, দেশের হয়ে বিমানে করে উড়ে বেড়ানোর। সেই নেশা থেকেই ১৯৬১ সালে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে। এরপর চলে যান রিসালপুরে, পাকিস্তান এয়ার ফোর্স একাডেমিতে। সেখানেও রাখেন মেধার স্বাক্ষর। কৃতিত্বের সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর ১৯৬৩ সালে পাইলট অফিসার হিসেবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। কমিশনের পর তাকে মৌরিপুর এয়ার বেজে (বর্তমানে মাসরুর বিমান ঘাঁটি) নিযুক্ত করা হয়। ২নং স্কোয়াড্রনের জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিমান বাহিনীতে যোগদানের পরে সেখানেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন।
সেখানে তিনি টি-৩৩ জেট বিমানের ওপর কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ৭৫.৬৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি এফ-৮৬ স্যাবর জেট এর ওপরেও কনভার্সন কোর্স করেন এবং ৮১% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পাইলট কনভার্সন কোর্স এ ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে তাকে পেশোয়ারে ১৯নং স্কোয়াড্রনে পোস্টিং দেওয়া হয়।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন মতিউর রহমান। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় হঠাৎ মাঝ আকাশে অচল হয়ে গেলে অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে ইজেক্ট করেন তিনি। ককপিট থেকে বের হয়ে প্যারাসুটের সাহায্যে তিনি নিরাপদে মাটিতে অবতরণ করেন। [২]
⏩ আরও পড়ুন: হাইপেশিয়া : পৃথিবীর প্রথম মহিলা গণিতবিদ ও তার নির্মম মৃত্যু!
একই বছর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন মতিউর রহমান। ইরানের রানি ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে বিমান মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনিই ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। এরপর রিসালপুরে দুই বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর পদে কাজ করেন তিনি। সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭০ সালে তাকে বদলি করা হয় জেট ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে। অর্থাৎ, যুদ্ধবিমানের পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান:
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিমান বাহিনী থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। সাথে স্ত্রী মিলি রহমান ও দুই কন্যা। মতিউরের ছুটি ছিল মোটে দুই মাস। অর্থাৎ মার্চের শেষে তার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে দেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তাল হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেই মতিউর আঁচ করতে পেরেছিলেন, সামনে বড়ো কিছু ঘটতে চলেছে। এরপর এলো ২৫শে মার্চের সেই ভয়াল কালো রাত। ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার খবরে আর স্থির থাকতে পারলেন না মতিউর। বিমান বাহিনীর একজন অফিসার হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন। সেখানেই প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। সেই ক্যাম্পের অবস্থান গোপন থাকল না বেশিদিন। এপ্রিলের ১৪ তারিখ এফ-৮৬ স্যাবর যুদ্ধবিমানের সাহায্যে বোমাবর্ষণ শুরু হয় ভৈরবের সেই ক্যাম্পে। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন ভেবে মতিউর আগেই ক্যাম্পের স্থান পরিবর্তন করেছিলেন বলে সে যাত্রায় রক্ষা পান মতিউরসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা। আর সেই সময়েই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, একটি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা। তিনি হতাশ হয়ে বলেছিলেন, ‘আজ যারা বোমা হামলা করেছে, সেই পাইলটদের কেউ হয়তো আমারই ছাত্র। যদি একটি যুদ্ধবিমান থাকত, তাহলে আমি আমার দেশের জন্য লড়াই করতে পারতাম।’
সেদিন থেকেই মতিউরের মাথায় একটি বিমান ছিনতাইয়ের কথা গেঁথে গিয়েছিল। এরপর মতিউর করাচি ফিরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। ৯ই মে ১৯৭১ সালে তিনি সপরিবারে ফিরে যান তার কর্মস্থলে। করাচি পৌঁছে লক্ষ্য করলেন সেখানে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। তাঁকেও তাঁর নিজের দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে, দেওয়া হলো– ফ্লাইট সেফটি অফিসারের দায়িত্ব। মতিউর রহমানের চিন্তা তখন একটি বিমান হাতে পাওয়া নিয়ে। তিনি পরিকল্পনা শুরু করলেন। সহকর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করে বিমান বাহিনীর আস্থা অর্জন করতে শুরু করলেন। আর খুঁজতে শুরু করলেন সুযোগ।
সেই সুযোগ আসে আগস্ট মাসের ২০ তারিখে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানেরই এক ছাত্র রশিদ মিনহাজ সেদিন টি-৩৩ জঙ্গী বিমানে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর সমস্যার কথা বলে তাকে থামান। এ সময় মিনহাজ বিমানের ক্যানোপি (ককপিটের জানালা) খুলে সমস্যার কথা জানতে চাইলে মতিউর তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে বিমানটি নিয়ে উড্ডয়ন করেন। কিন্তু অজ্ঞান হওয়ার আগে মিনহাজ বলে ওঠেন, আই হ্যাভ বিন হাইজ্যাকড। এতে পাকিস্তান বিমান বাহিনী তখনই বিমানটি ছিনতাইয়ের কথা জেনে যায়। আর তৎক্ষণাৎ বিমানটির পেছনে ৪টি এফ-৮৬ স্যাবর জঙ্গী বিমানও উড্ডয়ন করে এবং মতিউরকে ধাওয়া করে। সাথে ছিল আরও একটি হেলিকপ্টার। উদ্দেশ্য মতিউরের বিমানটিকে ফোর্স ল্যান্ডিং করানো। কিন্তু দক্ষ পাইলট মতিউর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম উচ্চতা দিয়ে বিমানটিকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকেন ভারত সীমান্তের দিকে। এতে রাডারের চোখকে ফাঁকি দিতে সমর্থ হন তিনি। পেছনে ধাওয়া করা বিমানগুলোও তাঁর অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
করাচি থেকে বিমানটি তিনি উড়িয়ে নিয়ে যান সিন্ধু প্রদেশের সীমান্তবর্তী জিন্দা গ্রামে। আর মাত্র দুই মিনিট, তারপরেই তাঁর পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল ভারতের ভেতর। সেখানে পৌঁছাতে পারলেই দেশের স্বার্থে তাঁর এই বিপজ্জনক হাইজ্যাক মিশন সফল। কিন্তু সেসময়ই জ্ঞান ফিরে আসে তরুণ পাইলট রশিদ মিনহাজের। দুই দেশের দুই পাইলট তখন নিজের দেশের তাগিদে লড়াই চালিয়ে যান বিমানের ভেতরই। ছাত্র-শিক্ষকের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মিনহাজ ইজেক্ট করার সুইচ চেপে দেন। এতে ককপিট থেকে ছিঁটকে বাইরে পড়ে যান মতিউর। ব্লু বার্ড-১৬৬ (টি-৩৩) বিমানটি পাইলট মিনহাজসহ ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩২ মাইল দূরের থাট্টা জেলার জিন্দা গ্রামে একটি বালির ঢিবির ওপর বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে প্যারাস্যুট না থাকায় মাটিতে আছড়ে পড়ে নিহত হন মতিউর রহমান। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে তাঁর লাশ পড়েছিল। এই ঘটনায় পাকিস্তানি পাইলট মিনহাজও নিহত হন। সঙ্গে প্যারাস্যুট থাকলেও কম উচ্চতার কারণে প্যারাস্যুটটি খোলারই সুযোগ পাননি তিনি। ফলে বিধ্বস্ত বিমানের ভেতরেই মিনহাজকে মৃত্যুবরণ করে নিতে হয়। [৩]
সেদিনের ঘটনায়, তাঁদের দুজনের আত্মাহুতি দেওয়ার কারণে এক দুর্লভ ঘটনার সাক্ষী হয় বিশ্ব। একই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দুই দেশের দুই পাইলট নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ‘ উপাধিতে ভূষিত করে।
আর পাকিস্তান সেই তরুণ পাইলট রশিদ মিনহাজকে দেয়– ‘নিশান ই হায়দার’ উপাধি। যা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব। এছাড়া তাঁর নামে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটা ঘাঁটির নামকরণ করা হয়, করাচীর একাধিক রাস্তারও নামকরণ করা হয়।
সেদিন মিনহাজের মরদেহ যথাযোগ্য সম্মানের সাথে সমাধিস্থ করা হলেও, মতিউর রহমানের কবরে লেখা হয়েছিল, ‘ইধার সো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’ অর্থাৎ ‘এখানে শুয়ে আছে এক বিশ্বাসঘাতক’। অপরদিকে রশিদ মিনহাজের কবরে লেখা হয়েছিল, ‘ফরোয়াজে দোনো কি এক ফেজা মে মুমিন কা নিশা আওর মুনাফিককা নিশা, আওর রাশিদ কি শাহাদত ইয়ে হ্যায়।’ অর্থাৎ, ‘মুসলমান ও মুনাফিকের চিহ্ন আলাদা। যদিও একই ভূমিতে তাদের বিচরণ। রশিদের মৃত্যু তাই প্রমাণ করে’। [২]
⏩ আরও পড়ুন: বাঙালি রমণীর শতবর্ষী পুরোনো চিঠি!
উল্লেখ্য, তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা মিনহাজের মৃত্যুর জন্য গর্ববোধ করে ৩০ আগস্ট, ১৯৭১ এ ‘আমরা গর্বিত’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, তখনকার ছাত্র সংঘ (বর্তমান ছাত্র শিবির) সংগঠনের সভাপতি আল্লামা মতিউর রহমান নিজামীর বয়ানে।
পরবর্তীতে, ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এ ‘শহীদ মিনহাজের জীবনের শেষ কয়েকটি মূহুর্ত’ শিরোনামে দৈনিক সংগ্রামে পরিবেশিত সংবাদে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক ও রশিদ মিনহাজকে শহিদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, তৎকালীন ছাত্র সংঘের প্রধান নিজামী মিনহাজের পিতার উদ্দেশ্যে একটি শোকবার্তা পাঠান। সেই শোকবার্তায় নিজামী বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে ভারতীয় অ্যাজেন্ট বলে উল্লেখ করেন। [৪]
সমাধি স্থানান্তর:
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর সমাধি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও পাকিস্তানের মাটিতে অবহেলায় পড়ে ছিল। তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির একটি কবরস্থানে। ৩৫ বছর পর, অবশেষে ২০০৬ সালের ২৪ জুন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর দেহাবশেষ পাকিস্তানের মাসরুর ঘাঁটি থেকে উঠিয়ে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। পরদিন ২৫ জুন তার দেহাবশেষ পূর্ণাঙ্গ সামরিক কায়দা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়। এ যেন মায়ের ছেলে, মায়ের কোলে ফেরা! সেই থেকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন আমাদের অকুতোভয় এই জাতীয় বীর। [৫]
সম্মাননা:
বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব ছাড়াও মতিউর রহমানকে বিভিন্নভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যশোর বিমান ঘাঁটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিমান বাহিনী তাঁর নামে একটি ট্রফি চালু করেছে। বিমান প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্ব প্রদর্শনকারীকে এটি প্রদান করা হয়। [৬] এছাড়াও তাঁর নামে ও স্মরণে বেশকিছু স্মৃতিফলক, স্তম্ভ ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান আমাদের জাতীয় বীর। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে যিনি একটিবারের জন্যও চিন্তা করেননি। এমনকি নিজের পরিবারের মায়া ত্যাগ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে ও নিজের পরিবারকে ভিনদেশের মাটিতে বিপন্ন করেছেন, নিজের জীবন দিয়েছেন। তাঁর মতো সূর্য সন্তানদের এই ঋণ কোনোদিনই শোধ হবে না। প্রয়াণ দিবসে, দেশের জন্য শহিদ এই বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধা ও স্যালুট।