মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী!

মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী!

বিজ্ঞানের ভাষায়, পরজীবী হলো উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী যা অন্য জীবের দেহের ভেতরে বাস করে। কিছু পরজীবীকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দেহের ভেতর বাস করতে হয়, অন্যরা মানুষের দেহ ছাড়া বাঁচতে পারে; তবে তারা যদি সুযোগ পায় তাহলে মানুষের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, বেশিরভাগ পরজীবী আমাদের শরীরের জন্য খারাপ। আজকের পোস্টে আমরা— মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলো ক্ষতিকারক বলেই পরিচিত! চলুন শুরু করা যাক।

মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী

প্লাজমোডিয়াম

প্লাজমোডিয়াম একটি ক্ষুদ্র পরজীবী যা ম্যালেরিয়া নামক রোগ সৃষ্টি করে। ম্যালেরিয়া কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়, এটি একটি রোগের নাম, যা মশা দ্বারা ছড়ায়। প্রতি বছর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। যখন কারও ম্যালেরিয়া হয়, তখন তারা মাথাব্যথা, বমি বা পেটে ব্যথা সহ নানান অসুস্থতা বোধ করতে পারে। যদিও ম্যালেরিয়ার আক্রমণ অন্যান্য পরজীবীর মতো এত গুরুতর নয়, তবে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নিজের যত্ন না নেয় বা সতর্ক না থাকে তাহলে ম্যালেরিয়া মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

আক্রান্ত হতে পারেন যেভাবে

ম্যালেরিয়া এমন একটি রোগ যা মানুষকে অ্যানোফিলিস নামক একটি নির্দিষ্ট ধরনের মশা কামড়ালে হয়। এই মশা যখন কাউকে কামড়ায় তখন তার শরীরে প্লাজমোডিয়াম নামক জীবাণু প্রবেশ করে। এই জীবাণু লিভার এবং রক্তের কোষে যায় এবং সংখ্যাবৃদ্ধি শুরু করে। এর ফলে দেহের লোহিত রক্তকনিকা ধ্বংস হয় এবং রোগিদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। যার কারণে রোগিদের ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানো অ্যানোফিলিস মশা প্লাজমোডিয়াম জীবাণু বহন করে, এরপর সুস্থ মানুষকে ওই মশা কামড়ালে তিনিও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।

⏩ আরও পড়ুন: জাদুকরী ৫টি ঔষধি গাছ!

টেপওর্য়াম বা ফিতাকৃমি

টেপওয়ার্ম হলো এক ধরনের পরজীবী যা শরীরের ভেতরে বাস করে এবং মানুষ বা প্রাণীকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এটি দেখতে লম্বা, চ্যাপ্টা কৃমির মতো। মানুষ খাবারের সাথে এর ডিম বা লার্ভা খেয়ে ফেললে তখন সেগুলো অন্ত্রে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করে। এর ফলে পরজীবী সংক্রান্ত সিস্টিসারকোসিস নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সিস্টিসারকোসিস এর ফলে মানুষের মাথায়ও পরজীবী বাস করতে পারে।

ফিতাকৃমি মানুষের যে যে ক্ষতি করতে পারে

  • টেপওয়ার্মগুলি এমন প্রাণী যা মানুষের অন্ত্রে বাস করে এবং তারা আমাদের খাওয়া খাবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি কেড়ে নেয়।
  • কখনো কখনো টেপওয়ার্মগুলি অনেক বড়ো হয়ে যেতে পারে এবং আমাদের অন্ত্রগুলিকে ব্লক করতে পারে, যার ফলে পেটে প্রচুর ব্যথা, বমি বমি ভাব, এমনকি পেটে প্রদাহ হতে পারে।
  • কিছু লোকের মধ্যে, টেপওয়ার্ম বা তাদের ডিম শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে, লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  • কিছু কিছু টেপওয়ার্ম আমাদের শরীরের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডসহ অন্যান্য অংশে যেতে পারে। এতে করে বিভিন্ন স্নায়ুবিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন- খিঁচুনি এবং মাথা ব্যথা।

যেভাবে আমরা আক্রান্ত হতে পারি

  • শামুকের লার্ভা খেলে যা লেটুস বা কলমিদল শালুকে লেগে থাকে।
  • শুয়োরের মাংস খাওয়া, যা যথেষ্ট রান্না করা হয় না বা সুশি খেলে।
  • নোংরা পানি পান করলেও ফিতাকৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।

⏩ আরও পড়ুন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আগামী পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ!

ফাইলেরিয়াল বা গোল কৃমি

ফাইলেরিয়াল কৃমি হলো ক্ষুদ্র কৃমি যা মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তারা আমাদের শরীরে বাস করে এবং আমাদের শরীরের একটি অংশকে ক্ষতি করতে পারে যাকে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বলা হয়। এতে গোদ রোগের মতো রোগ হতে পারে। এই কৃমি অন্যান্য কৃমির মতো আমাদের পেটে বাস করে না, তারা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে বাস করে। যখন তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করে, তারা আমাদের শরীরের কিছু টিউবকে ব্লক করে দেয়, যার ফলে ত্বক ফুলে উঠতে পারে এবং হাতির চামড়ার মতো দেখাতে পারে। এটি বেশিরভাগই আমাদের হাত, পা, অণ্ডকোষ এবং স্তনে ঘটে।

যেভাবে আমরা আক্রান্ত হতে পারি

  • ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটাহাঁটি করার সময় কোষ দিয়ে এই পরজীবী দেহে প্রবেশ করতে পারে।
  • জীবাণু আছে এমন জল পান করলে তখন এই ছোট্ট কৃমিটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • এটি মশা দ্বারা কামড়ানোর ফলেও হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান প্যারালাইসিক টিক

এই টিকগুলো বর্হিপরজীবী হিসেবে পরিচিত। টিকগুলি হলো ছোটো বাগ যা ত্বকে কামড় দিয়ে প্রাণী এবং মানুষের ক্ষতি করতে পারে। অর্থাৎ ক্ষতিসাধন এর জন্য এদের মানুষের দেহের ভেতর প্রবেশ করতে হয় না। তারা জীবদের লাইম রোগ এবং রিকেটসিয়ার মতো রোগে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান প্যারালাইসিস টিক সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরনের টিক যারা ‘ইক্সোডেস হলোসাইক্লাস’ নামে পরিচিত। এটি শরীরের ভেতর এক ধরনের নিউরোটক্সিন ইনজেক্ট করতে পারে যা মানুষের পেশীগুলোকে কাজ করা থেকে বিরত রাখে, এতে করে নড়াচড়া করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি এটি আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে, তাহলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দিতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি মারাও যেতে পারে। টিক নামক এই বিশেষ ধরনের বাগ শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় বাস করে। মানুষ এখনো এই বাগের জন্য কোনো অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি।

⏩ আরও পড়ুন: পানির উপকারিতা ও অপকারিতা!

স্ক্যাবিস মাইট

স্ক্যাবিস মাইট হলো ছোটো বাগ যা দেখতে মাকড়সার মতো। এরা মানুষকে কামড় দিয়ে অসুস্থ করতে পারে না, তবে তারা মানুষের ত্বকে মলত্যাগ করে, এর ফলে পরবর্তীতে ত্বক চুলকানো এবং জ্বলতে পারে। আমরা যদি নখ দিয়ে আমাদের ত্বক আঁচড়াই, তাহলে এদের মল আমাদের দেহের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং আমাদের অসুস্থ করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যদি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। এটি আমাদের ত্বককে শক্ত এবং জীর্ণ করতে পারে।

আমরা যেভাবে এই পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি

মূলত এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে তা সহজেই সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়াতে পারে। তাই, নিজেকে সুস্থ রাখতে খোসপাঁচড়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকাই ভালো।

স্ক্রুওর্য়াম ফ্লাই

স্ক্রুওয়ার্ম এক ধরনের পরজীবী যা মাইয়াসিস নামক রোগ সৃষ্টি করে। আমরা যে পরজীবীর কথা বলছি তার বৈজ্ঞানিক নাম হল Cochliomia hominivorax।  হোমিনি্ভোরাক্স এর অর্থ “মানুষখেকো”। কারণ, এর লার্ভা বা বাচ্চা মানুষের মাংস খায়। এই লার্ভাসহ স্ত্রী মাছি যখন মানুষের কোনো ক্ষতস্থানে বসে তখন এটি একসাথে অনেকগুলো ডিম পাড়ে। এই ডিমগুলি দ্রুতই, ১ দিনের মধ্যে শূককীটে পরিণত হয়, যা ক্ষত থেকে মাংস খায়। এই শূককীটগুলো মাংসপেশী, রক্তনালী এবং স্নায়ুতে গর্ত তৈরি করে আশ্রয় নিতে পারে। যদি কারও শরীরে এই বাগ থাকে, ডাক্তাররা ছোটো ছোটো গর্ত করে এবং গভীরে গিয়ে সেগুলো বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটি সত্যিই বিপজ্জনক, কারণ এই পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত এমন ১০০ জনের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যু হতে পারে। এমনকি যদি কেউ বেঁচে থাকে, তবুও তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না! কারণ শূককিটের দল তাদের মাংস খেতে থাকে। এর ফলে তাদের শরীর ধীরে ধীরে ভেঙে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ক্রুওয়ার্মগুলি এমন পরজীবী যা প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়। তবে আজকাল, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বনাঞ্চলেও এদের পাওয়া যায়।

⏩ আরও পড়ুন: কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!

*********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “মানবদেহে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top