রিংকু সিং, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এক ম্যাচে শেষ ওভারে টানা পাঁচ ছক্কায় সাজানো অতিমানবিক এক ইনিংস খেলার পর থেকে ক্রিকেট বিশ্বের আলোচনার তুঙ্গে ভারতীয় এই প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার। দেশ ছাড়িয়ে আন্তজার্তিক অঙ্গনেও ভাসছেন প্রশংসার স্রোতে। তবে রিংকু সিংয়ের আজকের অবস্থানে উঠে আসার গল্পটা মোটেও সহজ ছিল না। চলুন, জেনে নেওয়া যাক তার ব্যাপারে।
রিংকু সিং : এক নায়কের গল্প!
প্রতিভাবান রিংকু সিংয়ের জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশে। ১২ অক্টোবর, ১৯৯৭ সালে আলিগড়ে জন্মগ্রহণকারী রিংকু সিং ক্রিকেট খেলা শুরু করেন খুব অল্প বয়সেই। তিনি ২০১৬ সালে উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। খুব শীঘ্রই একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজের নাম তৈরি করেন এই অলরাউন্ডার।
প্লেয়িং স্টাইলের বিচারে রিংকু একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি স্পিনার। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী এবং বড়ো ছক্কা মারার ক্ষমতার জন্য রিংকু বিশেষ পরিচিত। এছাড়াও একজন ফিল্ডার হিসেবেও তার দক্ষতা চোখে পড়ার মতো, বিভিন্ন সময়ে দারুণ সব ক্যাচ নিতে দেখা গিয়েছে তাকে।
⏩ আরও পড়ুন: অ্যাশেজ : শতাব্দী-প্রাচীন এক গৌরবময় সিরিজ!
উত্তরপ্রদেশের হয়ে ভারতের ঐতিহ্যবাহী রঞ্জি ট্রফিতে তার অভিষেক মৌসুমে, রিংকু ১০ ম্যাচে ৪১৬ রান করেছিলেন, দুটি সেঞ্চুরি এবং দুটি অর্ধশতক। তার পারফরম্যান্স সে বছর উত্তরপ্রদেশকে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেছিল। ২০১৭-১৮ সিজনে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ৩০৫ রান করে তিনি তার দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান-স্কোরার ছিলেন।
২০১৭ সালে প্রথমবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিলামের সময় রিংকু সিং কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) এর চোখে ধরা পড়েন। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি ৮০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাকে দলে টেনে নেয়।
ছোটোবেলা থেকেই দারিদ্র্য আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করে বড়ো হওয়া রিংকু সিং সেই টাকা পেয়ে পুরোটাই তুলে দেন পরিবারের হাতে। খরচ করেন নিজেদের বাড়ি তৈরি করতে আর বোনের বিয়ের খরচ মেটাতে। তার আগে তারা থাকতেন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান-লাগোয়া একটি দুই রুমের ছোটো বাসায়।
যাই হোক, ২০১৭ সালে নিজের প্রথম মৌসুমেই আইপিএলে অভিষিক্ত হন রিংকু সিং। তবে সেবার নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। কেকেআর-এর হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৩৮ রান করেন রিংকু।
কিন্তু পরের বছরেই ২০১৮ সালের আইপিএলের ফাইনালে রিঙ্কু সিংয়ের ক্যারিয়ারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুহূর্তটি আসে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ফাইনালে, কলকাতা ১৫ তম ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৯৩ রানে লড়াই করছিল, সামনে ১৭৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা। রিংকু তখন ৭ নম্বরে এসে ১৪ বলে ২৪ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নক খেলেন, যার মধ্যে তিনটি ছক্কা ছিল। তিনি দীনেশ কার্তিকের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ তৈরি করেন এবং দুই বল হাতে রেখেই কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেন।
⏩ আরও পড়ুন: অদ্ভুত চার ক্রিকেটীয় ঘটনা!
এরপর থেকে নিয়মিতই আইপিএলে কলকাতার হয়ে খেলছেন রিংকু সিং। প্রতি মৌসুমেই দলের হয়ে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এবং সর্বশেষ ম্যাচের গল্প তো সবারই জানা। গুজরাটের টাইটানসের বিপক্ষে শেষ ওভারে যখন ২৯ রানের প্রয়োজন তখন ইয়াশ দয়ালের শেষ পাঁচ বলে টানা পাঁচ ছক্কায় তিনি দলকে জিতিয়েছেন। আর এরপর থেকেই অবিশ্বাস্য এই ইনিংসের জন্য রীতিমতো ক্রিকেটে আলোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠেছেন এই ক্রিকেটার।
তবে ঘরোয়া সার্কিট এবং আইপিএলে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও, রিংকু সিং এখনো ভারতীয় দলে তার জায়গা নিশ্চিত করতে পারেননি। যাইহোক, তিনি এখনো তরুণ এবং সব ঠিক থাকলে তার সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ ক্যারিয়ার। নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি অবশ্যই ভবিষ্যতে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবেন। তিনি দেখিয়েছেন যে তার চাপের মধ্যে পারফর্ম করার ক্ষমতা রয়েছে এবং যেকোনো দলের জন্য তিনি একজন মূল্যবান সম্পদ হতে পারেন।
আসলেই সে নায়ক। ❤️