ফুটবল, এযাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর অন্যতম একটি। তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে সেরা খেলাও বটে। ফুটবলের এই বিপুল জনপ্রিয়তার বড়ো একটি কারণ বিশ্বব্যাপী খেলাটির কাঠামোগত দৃঢ়তা। এই কাঠামোগত দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফুটবল লীগ এবং লীগের প্রতিযোগিতা। আর ফুটবল লীগের কথা আসলেই চলে আসে ফুটবল ক্লাবগুলোর কথাও। সারাবিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে বিভিন্ন শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফুটবল ক্লাব। ক্লাবগুলো কখনো দেশের ভেতরেই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে, কখনো আবার দেশের গন্ডি পেরিয়ে মহাদেশীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও নামে। ফুটবল নিয়ে যাদের আগ্রহ, তাদের প্রায় সবাই সাধারণত হয়ে থাকেন এমন কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের সমর্থক বা ভক্ত। এমনই একটি ফুটবল ক্লাবের নাম রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব দ্য ফুটবল, সংক্ষেপে রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বের আরও অনেক নামকরা ফুটবল ক্লাবের মতো এটিও একটি। তবে অর্জন, খ্যাতি বা পরিসংখ্যান সবদিক বিবেচনায় এটিই হয়তো বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাব বলে বিবেচিত হবে। আজকের পোস্টে আমরা জানবো— রিয়াল মাদ্রিদ নামের এই বিশ্বসেরা ফুটবল ক্লাবের গল্প!
রিয়াল মাদ্রিদ : বিশ্বসেরা এক ফুটবল ক্লাবের গল্প
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এই ক্লাবটি গড়ে উঠে ১৯০২ সালের ০৬ মার্চ, আজ থেকে আরও ১২১ বছর আগে। মূলত শহরের নামেই ক্লাবটির নামকরণ করা হয় মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব, পরবর্তীতে একই শহরে আরও ফুটবল ক্লাব গড়ে ওঠায় এর নাম হয়ে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ বা আসল মাদ্রিদ। তবে এর আগে থেকেই সমর্থকরা ‘রয়্যাল মাদ্রিদ’ নামে ক্লাবটির পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এখনও যা অনেকের কাছে প্রচলিত।
⏩ আরও পড়ুন: টিকিটাকা : শুরুটা হয়েছিল যেভাবে!
১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩ বছর পর স্প্যানিশ কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম তাদের শিরোপা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর ১৯০৯ সালে ক্লাবটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আদোলেফ মেলেন্দেজ একটি চুক্তির ভিত্তিতে এই ক্লাবটিকে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে পরিণত করেন। ১৯২০ সালে অন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা হওয়া ও অন্যান্য সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ক্লাবটি রিয়াল উপাধি লাভ করে ও ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়াল মাদ্রিদ’ রাখা হয়।
নামের মতোই ট্রফি জেতার দিক থেকেও রিয়াল মাদ্রিদ একটি রাজকীয় বা রয়্যাল ক্লাব। আজ অব্দি ক্লাবটির জেতা ট্রফির সংখ্যা ১০০ ছুঁয়েছে ইতোমধ্যেই। রিয়াল মাদ্রিদের জেতা ট্রফিগুলো প্রতিযোগিতাভেদে নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. লা লীগা – ৩৫
২. কোপা দেল রে – ১৯
৩. উয়েফা ইউরোপিয়ান কাপ বা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ – ১৪
৪. স্প্যানিশ সুপার কাপ – ১২
৫. উয়েফা সুপার কাপ – ৫
৬. ফিফা ক্লাব বিশ্ব কাপ – ৫
৭. আআন্তঃমহাদেশীয় কাপ – ৩
৮. উয়েফা কাপ – ২
৯. ল্যাটিন কাপ – ২
১০. পাকুয়েনা কোপা দেল মুন্ডো – ২
১১. ফিফা ক্লাব অব দ্যা সেঞ্চুরি – ১
রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো ক্লাবটির স্টেডিয়াম বা হোম ভ্যানু। যার নাম ‘এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু’। ক্লাবের সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার ও প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সম্মানার্থেই স্টেডিয়ামটির এই নামকরণ করা হয়।
⏩ আরও পড়ুন: ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা!
এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু প্রতিষ্ঠিত হয় ২৭ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে, ক্লাবের প্রতিষ্ঠার প্রায় সাড়ে তিন যুগ পর। তিন বছর নির্মাণকাজ চলার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয় এবং সমর্থকদের খেলা দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ভেন্যুটির নাম ছিল ‘নিও সামারতিন’। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে এটির বর্তমান নামে নামকরণ হয়। প্রতিষ্ঠার পর স্টেডিয়ামটিতে ১৯৮২ ও ২০০১ সালে দুই দফার পুনরায় সংস্কার কাজ চালানো হয়। এছাড়াও ১৯৫৩, ১৯৯২, ১৯৯৪ ও ২০১১ সালে চার দফায় ক্লাবটির দর্শক ধারণ ক্ষমতায় রদ বদল আনা হয়। ১০৫ × ৬৮ মিটার আয়তনের এই মাঠটির বর্তমান দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৮১০৪৪ জন। ক্লাবটির স্থপতিদের তালিকায় রয়েছেন ম্যানুয়েল মুনোজ মনাস্তেরিও, লুইস আলেমানি সোলার, এবং আন্তোনিও লামেলা।
ট্রফি সংখ্যা, স্টেডিয়াম কিংবা ঐতিহ্য সবদিক থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বের সেরা এক ফুটবল ক্লাব। যার সমর্থকরা ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বে! যে ক্লাবের খেলা মুগ্ধ হয়ে দেখে গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষেরা!
দারুণ! আই লাভ রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব! 😴