আপনি বর্তমান সময়ের একজন সিনেমাপ্রেমী হয়ে থাকলে অ্যানিমে সিনেমার সম্পর্কে কম বেশি জেনে থাকার কথা। অ্যানিমে হলো অ্যানিমেশন সিনেমার একটি ধারা যা জাপানে প্রথম তৈরি হয়েছিল এবং বর্তমানে তা সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অ্যানিমে তার দুর্দান্ত স্টোরি লাইন, অনন্য স্টাইল ও অসাধারণ সব চরিত্রের জন্য খুব সহজেই সারা বিশ্বের দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে। ডেইলি লাইভের আজকের এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব— আমার দেখা সেরা ৫টি অ্যানিমে সিনেমা নিয়ে। চলুন শুরু করি।
সেরা ৫টি অ্যানিমে সিনেমা
১. Spirited Away (স্পিরিটেড অ্যাওয়ে)
পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি পরিচালিত এবং স্টুডিও ঘিবলি দ্বারা প্রযোজিত এই সিনেমাটিকে অ্যানিমেশনের একটি মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে ধরা যায়। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই অ্যানিমে সিনেমাটি সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসায়ও ভাসে। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৩০৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে জাপানের ইতিহাসের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমার রেকর্ড করে। সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংশা পাওয়া এই অ্যানিমেটি অনায়াসেই অ্যানিমেশন সিনেমার জগতে তো বটেই, এছাড়াও একবিংশ শতাব্দীর সেরা সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এটি প্রথম এবং একমাত্র অ্যানিমেটেড ও ইংরেজী ভাষার বাইরের সিনেমা হিসেবে ৭৫তম অ্যাকাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিল।
অ্যানিমেটি শুরু হয় চিহিরো নামক একটি সাধারণ বালিকাকে দিয়ে, যে তার পরিবারের সাথে তাদের নতুন বাসার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু যাত্রাপথে তারা পথ হারিয়ে একটি রহস্যময় এবং জাদুকরী গুহার সামনে এসে দাঁড়ায়। কৌতুহলী হয়ে চিহিরোর বাবা-মা সেই গুহায় ঢুকলে অপর প্রান্তে তারা একটি অত্যাশ্চর্য ও পরিত্যক্ত পার্ক দেখতে পায়। নির্জন রহস্যময় এই পার্কটিতে তারা ছাড়াও আরও অনেকেই ছিল, তবে তারা অশরীরী হওয়ায় তাদের দেখা যাচ্ছিল না। এটি আসলে একটি জাদুর জগৎ ছিল এবং এই জগতে তারা আটকা পড়ে যায়। এরপর চিহিরোর সাথে ঘটে যাওয়া নানা অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে দিয়ে কখন সময় কেটে যাবে আপনি টেরই পাবেন না। এর অত্যাশ্চর্য ভিজ্যুয়াল, অসাধারণ প্লট এবং মিউজিকের জন্য স্পিরিটেড অ্যাওয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
২. Akira (আকিরা)
আকিরা হলো অ্যানিমে ঘরানার একটি ল্যান্ডমার্ক ফিল্ম। ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই অ্যানিমেটি টোকিওর একদল বন্ধুর গল্প বলে। যার মধ্যে একজন বাইক অ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হলে জানা যায় তার ভেতর তৈরি হয়েছে অত্যাশ্চার্য মানসিক ক্ষমতা, যা কী না সেই শহরের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর গ্রাউন্ডব্রেকিং অ্যানিমেশন, জটিল চরিত্র এবং সাহসী গল্প বলার ধরনের জন্য সহজেই এটি দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে। এর অ্যানিমেশন এতটাই নিখুঁত যে অনেক সমালোচক এর প্রশংসা করেছেন। রাতের টোকিও শহরের গগনচুম্বী সব অট্টালিকার বিশদ বিবরণ এতটাই নিখুঁত যে প্রতিটি জানালা ও আলোকে পৃথক করা যায়। আকিরা মুক্তির পর থেকে গত কয়েক দশক ধরে অসংখ্য চলচ্চিত্র এবং অ্যানিমে সিরিজকে প্রভাবিত করেছে, এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে অনেক ভিডিয়ো গেমও। আকিরাকে জাপানি অ্যানিমে জগতের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
⏩ আরও পড়ুন: বলিউড : বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প!
৩. Your Name (ইয়োর নেম)
পরিচালক মাকোটো শিনকাই দ্বারা পরিচালিত, ইয়োর নেম হলো একটি রোমান্টিক ফ্যান্টাসি জনরার ফিল্ম। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই অ্যানিমে ফিল্মটি পরিচালক মাকোটো শিনকাইয়ের একই নামের নিজস্ব একটি উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। উপন্যাসটি সেই ফিল্মটি মুক্তিরই মাত্র এক মাস আগে প্রকাশিত হয়। ফিল্মটি দুজন কিশোর-কিশোরীর রহস্যময় গল্প নিয়ে তৈরি। শহরে বসবাস করা কিশোর তাকি ও গ্রামে বসবাস করা কিশোরী মিৎসুহা হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে ঘুমের মধ্যে তাদের দেহ পরিবর্তন হচ্ছে। সকালে উঠে মিৎসুহা দেখতে পায় সে তাকির শরীরে অবস্থান করছে, অপরদিকে তাকি নিজেকে মিৎসুহার শরীরে আবিষ্কার করে। তারা তাদের এই আশ্চর্যজনক সংযোগের পেছনের রহস্য আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে গিয়ে একে অপরের প্রতি গভীর প্রেমে জড়িয়ে যায়। এই সিনেমাটির সুন্দর অ্যানিমেশন, হৃদয়গ্রাহী গল্প, এবং মিউজিকের জন্য এটি সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইওর নেম অ্যানিমে ঘরানার একটি আধুনিক ক্লাসিক হয়ে ওঠেছে।
৪. Grave of the Fireflies (গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস)
জাপানি পরিচালক ইসাও তাকাহাতা দ্বারা পরিচালিত এবং স্টুডিও ঘিবলি দ্বারা প্রযোজিত অ্যানিমে গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস একটি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও আবেগপূর্ণ চলচ্চিত্র। আকিয়ুকি নোসাকার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস’ এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমাটি দেখে যদি আপনার চোখে জল না আসে, বলতেই হবে আপনি একজন অতিমানব। সিনেমাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে বেঁচে থাকার জন্য লড়াইরত দুই ভাইবোনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিকগুলির মধ্যে একটি হলো এটি যুদ্ধের সরাসরি বিস্তারিত তেমন দৃশ্য না দেখিয়েও এটি যুদ্ধের ভয়াবহ রূপ দেখাতে সক্ষম হয়েছে। চলচ্চিত্রটি যুদ্ধের কঠোর বাস্তবতাকে চিত্রিত করেছে ও সাধারণ মানুষের যুদ্ধের জন্য কী কী ত্যাগ করতে হয় সেই কষ্টকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে । দেড় ঘণ্টার এই সিনেমাটি আপনার মানসিকতাকে ভয়াবহ ভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম। আপনি অতি আবেগপ্রবণ ব্যক্তিত্বের হলে, অ্যানিমেটি না দেখা-ই আপনার জন্য শ্রেয় হবে।
৫. Perfect Blue (পারফেক্ট ব্লু)
পরিচালক সাতোশি কন দ্বারা পরিচালিত অ্যানিমে সিনেমা পারফেক্ট ব্লু হলো একটি বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার। সিনেমাটিতে তারকাদের খ্যাতি ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের পেছনের অন্ধকার দিকগুলিকে খুঁজে দেখানো হয়েছে। এখানে একজন পপ গায়কের জীবনের গল্প আমরা দেখতে পাই। এই বিখ্যাত পপ গায়কটি হঠাৎ করেই একজন রহস্যময় ব্যক্তির নজরে পড়ে, যে তার পিছু নিতে শুরু করে। এভাবেই চলতে চলতে একসময় গায়কটির সামনে তার জাঁকজমকপূর্ণ জগতের রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করে এবং তাকে তার নিজের পরিচয় সম্পর্কে ভয়ঙ্কর সত্যের মুখোমুখি হতে হয়। এর অসাধারণ গল্প ও ভিজ্যুয়াল সব মিলিয়ে পারফেক্ট ব্লু এমন একটি ফিল্ম যা আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাকে নিজের আসন থেকে উঠতে দেবে না।
**********
প্রিয় পাঠক, এগুলি সর্বকালের সেরা ৫টি অ্যানিমে সিনেমা হিসেবে আমার পছন্দের তালিকায় থাকবে। প্রতিটি অ্যানিমে এক একটি মাস্টারপিস। যদি আপনি ইতিমধ্যে না দেখে থাকেন, তবে এই সিনেমাগুলো দেখে নিতে পারেন জলদিই।