সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া!

সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া!

বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার ফলে ছোটো বড়ো প্রায় সব ব্যবসা-ই ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ মন্দায় মারাত্মক পরিণতি ভোগ করবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো। বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে— ‘সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া’ নিয়ে ডেইলি লাইভের আজকের এই পোস্ট।

বর্তমানে বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড়ো খাত হচ্ছে কৃষি, এই সময়ে কৃষির উন্নতি চোখে পড়ার মতো। জীবন জীবিকার জন্য এদেশের জনগণ ও অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখনো শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং মোট জিডিপির ২২ শতাংশ আসে কৃষি থেকে।

আবার বাংলাদেশে প্রায় অর্ধকোটি শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার। তাই কৃষি ব্যবসায় অনায়াসে বাংলাদেশের বেকারত্ব অবসান করতে পারবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

কৃষিকাজে লাভবান হওয়ার জন্য প্রয়োজন কোন পণ্য নিয়ে চাষাবাদ করবেন সেই সঠিক পণ্যটি নির্বাচন করা। আজ আমরা আপনাদের সাথে কিছু স্বল্প পুঁজির ও সেরা ৫টি লাভজনক কৃষি বিজনেস আইডিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেনো, যা করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনি খুব সহজেই একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া

মৌমাছি পালন

মৌমাছি পালন বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় এবং লাভজনক একটি ব্যবসা। অনেকেই মনে করেন মৌমাছি পালনের মাধ্যমে কেবল মধুই সংগ্রহ করা সম্ভব, অথচ মৌমাছি পালন থেকে মোটামুটি অনেক ধরনের প্রোডাক্ট বের করা সম্ভব যেগুলোর মূল্য অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ লোকেই এ সম্পর্কে জানেন না।

যেমন: মৌমাছি পালন থেকে আপনি BeesWax বের করতে পারেন যেটার মূল্য প্রতিকেজি ২০০০ টাকা হয়ে থাকে।

⏩ আরও পড়ুন: অনলাইন শপিং করার টিপস!

আপনি Bee Pollen বের করতে পারেন যেটার মূল্য প্রতিকেজি ৩৫০০ টাকা হয়ে থাকে, Bee propolis বের করতে পারেন যেটার মূল্য প্রতিকেজি ৪০০০ টাকা হয়ে থাকে। এছাড়া Bee Royal Jelly বের করতে পারেন যেটার মূল্য প্রতিকেজি ১৫০০ টাকা হয়ে থাকে।

আর মধু তো আপনি বের করতেই পারবেন যেটার মূল্য প্রতিকেজি ৭০০-৯০০ টাকা হয়ে থাকে। মধুর চাহিদাও বর্তমান বাজারে অনেক বেশি।

এই প্রোডাক্টগুলো আপনি wholesale market, local retail market, super market, food processing market বা অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন।

আর আপনি যদি নিজস্ব কোনো বাগানে, যেমন- সরিষা ফুলের মধু পাবার জন্য সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষ করেন, তাহলে আপনার সরিষার ফলনও ভালো হবে! কারণ, মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে আপনার বাগান থেকেও আয় হবে, আস্ত সরিষা কিংবা তেল বিক্রি করে।

জৈব সার উৎপাদন

জৈব সারের নানান উপকারিতা রয়েছে। ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়, সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়, জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটির রস মজুদ করতে সহায়তা করে যার ফলে বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না।

গোবর, মুরগির বিষ্টা, সবজির উচ্ছিষ্ট , হাড়ের গুঁড়া, কচুরিপানা, গাছের পাতা পঁচা, ডিমের খোসা, নিম খৈল, ব্যবহৃত চা পাতাসহ প্রভৃতি থেকে জৈব সার উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই জৈব সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এই জৈব সার উৎপাদন করে অনেকে সফলও হয়েছেন।

২০১৬ সালে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে জৈব সার উৎপাদনের সফলতার গল্প। ২০২১ সালে মোট ২১ লাখ টাকার জৈব সার বিক্রি করেন উদ্যোক্তা সাইফুল।

মাশরুম চাষ

মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার।

প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ শুরু করতে পারেন এই মাশরুম চাষ। একজন মানুষ যেকোনো কাজের বা চাকরির পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে বাড়তি কিছু আয় করতে পারেন।

যেকোনো সমান জায়গায় কম আলোয় মাশরুম চাষ করা যায়। বীজ বোনার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে কাঁচা ওয়েস্টার মাশরুমের কেজি ১৫০-২০০ টাকা। প্রতিকেজি শুকনো বা গুঁড়ো ওয়েস্টার মাশরুমের মূল্য ১৪০০ টাকা। এক কেজি তাজা বাটন মাশরুমের দাম ৫০০ টাকা। এককেজি তাজা কান মাশরুম ২০০ টাকায় এবং শুকনো কান মাশরুম ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৫টি ই-কমার্স বিজনেস আইডিয়া!

বর্তমানে অনেক সুপার-শপ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট বিদেশি মাশরুম দিয়ে খাবার তৈরি করেন। এখন আপনি যদি রেস্টুরেন্ট মালিকদের সাথে কথা বলে সেই মাশরুমগুলো চাষ করেন তাহলে, আপনার একটা নির্দিষ্ট ক্রেতা তৈরি হয়ে গেল। ফলে ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও থাকল না।

ক্যাপসিকাম চাষ

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি থাকে। সারা বিশ্বে টমেটোর পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। এটি অভিজাত হোটেল বা বড়ো বড়ো মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে।

আপনি যদি ২ একর জায়গায় ক্যাপসিকাম চাষ করতে চান তাহলে, খরচ হবে আনুমানিক ৩ লাখ টাকা। আর এই ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম চাষ থেকে আয় করতে পারবেন প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার মতো। অবশ্য আপনি চাষাবাদে পারদর্শী না হলে রিস্ক আছে।

ফুল চাষ

ফুল এখন শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই চাষ হয় না, বাণিজ্যিকভাবে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে ফুল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিয়ে-শাদি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফুল জন্মে। সময় বাঁচানো এবং নির্মল আনন্দের জন্য বর্ষজীবী বা স্থায়ী ফুলের চাষ করা হয়। যেমন: গোলাপ, জবা, চেরি, দোলনচাঁপা, মালতি, কামিনী, রঙ্গন, পাতাবাহার, বিভিন্ন অর্কিড ও নানাজাতের ক্যাকটাস।

বোনাস টিপস: মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষ

পুকুর বা জলাশয়ে একই সাথে হাঁস ও মাছ উৎপাদন পদ্ধতিকে সমন্বিত চাষ বলে। আমাদের আবহাওয়া ও জলবায়ু সমন্বিত চাষের অনুকূল।

মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষ বেশ লাভজনক একটি আইডিয়া। এখানে, আপনি একই ব্যবস্থাপনায় লাভজনকভাবে মাংস, ডিম এবং মাছ উৎপাদন করতে পারবেন, ফলে আলাদা লোকের প্রয়োজন না হওয়ায় শ্রমিক খরচও কমে।

⏩ আরও পড়ুন: নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে কী কী করবেন!

**********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— আজকের সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া। ওপরে উল্লেখিত অধিকাংশ ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করলে খুব দ্রুত সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ভালো লাগলে আর্টিকেলটি অবশ্যই শেয়ার করবেন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

3 thoughts on “সেরা ৫টি কৃষি বিজনেস আইডিয়া!”

  1. এগ্রো বিজনেস ভালোভাবে করতে পারলে এটা অনেক লাভজনক

  2. বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকতে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। আর এই টিপসগুলো এগ্রো বিজনেসে এগিয়ে যেতে বেশ সহায়ক হবে বলে আশাকরি।

  3. মৌমাছি চাষ, ক্যাপসিকাম চাষ, মাছ ও হাঁস চাষ, এই রকম এগ্রো বিজনেস আইডিয়ার সত্যিই দরকার ছিল। বাড়িতে অনেক জমি পড়ে আছে। কীভাবে কী দিয়ে শুরু করবো বুঝতে ছিলাম না। খুব উপকার হলো। বিশেষ করে, মাশরুম চাষ বিষয়ক আইডিয়াটা খুবই পছন্দ হয়েছে।

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top