বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যে লেখক তিনি হলেন হুমায়ূন আহমেদ। মাত্র উনিশ বছর বয়সে যিনি লিখতে শুরু করেছিলেন তার প্রথম উপন্যাস। লেখক বাবার অনুপ্রেরণায় আর নিজস্ব লেখনশৈলীর মিশেলে যিনি স্রেফ শখের বশে লিখতে শুরু করেছিলেন, তার কিছু বছর পরেই তিনি বনে যান সময়ের অন্যতম সেরা লেখক। হতে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর লেখক। হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমি পড়তে শুরু করি ২০০৯ সালের দিকে। তখন আমি সবে ক্লাস থ্রির ছাত্র। বইটির নাম ছিল বোতল ভূত। শিশুতোষ সেই উপন্যাসটি দিয়ে শুরু, এরপর যত দিন গিয়েছে, একে একে পড়ে শেষ করেছি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের দুশোটির বেশি বই। চলুন, ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে জেনে নিই— আমার পড়া হুমায়ূন আহমেদের সেরা পাঁচটি উপন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত।
হুমায়ূন আহমেদের সেরা পাঁচটি উপন্যাস
নন্দিত নরকে
‘নন্দিত নরকে’ হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসটি তিনি লিখেছিলেন ১৯৭০-৭১ সালের দিকে। তবে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল স্বাধীনতার পর। লেখক তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি তার পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ দেখে যেতে পেরেছিলেন। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে মাসিক মুখপাত্রে। পরবর্তীতে লেখক আহমদ ছফার উদ্যোগে বইটি খান ব্রাদার্স এন্ড কোং কর্তৃক বই আকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরেই বইটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ দুঃখ, টানাপোড়েন নিয়ে গল্প এগিয়ে গেছে সুচারুভাবে। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রথম উপন্যাসেই দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা।
⏩ আরও পড়ুন: ভালো সিজিপিএ অর্জনের সেরা কিছু কৌশল!
বাদশাহ নামদার
‘বাদশাহ নামদার’ উপন্যাসের মূল চরিত্র ছিলেন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। বাবর পুত্র হুমায়ুনের জীবন নিয়ে লেখা এই উপন্যাসটি লেখার পেছনে লেখক যে কারণটি বইয়ের ফ্ল্যাপে উল্লেখ করেছিলেন তা বেশ বিচিত্র! মূলত সম্রাট হুমায়ুনের সাথে লেখকের নামের মিল থাকায় তিনি বইটি লিখতে আগ্রহ পান। ইতিহাস আশ্রিত এই উপন্যাসে তৎকালীন মুঘল বাদশাহ হুমায়ুন, তার পুত্র আকবর ও সে সময়কার রাজ্য পরিচালনার বিভিন্ন তথ্যাদি বইটিতে উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ রচিত সেরা পাঁচটি উপন্যাসে তাই এই বইটি নিঃসন্দেহে জায়গা করে নেবে।
মধ্যাহ্ন
হুমায়ূন আহমেদ রচিত অন্যতম সেরা উপন্যাসটি হলো ‘মধ্যাহ্ন’। এটি দুই খণ্ডে রচিত একটি উপন্যাস। যার পটভূমি বিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে, ১৯০৫ সাল। এই উপন্যাসে লেখক নেত্রকোনা জেলার দৃশ্যপট তুলে এনেছেন। মূলত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, সম্প্রীতি বিষয়ক গ্রামীণ পটভূমিতে এই উপন্যাসটি তিনি রচনা করেছিলেন। এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হরিপদ সাহা; যিনি একটি মুসলিম ছেলেকে আদর করার অভিযোগে সমাজচ্যুত হয়েছিলেন।
জোছনা ও জননীর গল্প
‘জোছনা ও জননীর গল্প’ হুমায়ূন আহমেদের রচিত সবচেয়ে বড়ো উপন্যাস। এই উপন্যাসের পটভূমি মুক্তিযুদ্ধ। এই উপন্যাসটি ২০০৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের সেসব জানা অজানা কাহিনির বর্ণনা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার এই উপন্যাসে। ঝরঝরে ও সাবলীল ভাষায় লেখা এই উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ে মানুষের যুদ্ধ ভাবনা। তিনি দেখিয়েছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পাশবিকতার ভয়াবহ চিত্র। এই উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে অমর করে রাখবে।
⏩ আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন!
কোথাও কেউ নেই
‘কোথাও কেউ নেই’ হুমায়ূন আহমেদ রচিত অন্যতম সেরা এক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি একটি সামাজিক উপন্যাস, যেখানে মুনা নামের একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিল বাকের ভাই নামের এক তরুণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মিলন আর সম্ভব হয়নি। মুনা ভালোবেসেছিল একজন ভুল মানুষকে। যিনি মুনাকে ফেলে বিয়ে করে নেন তার অন্য এক প্রেমিকাকে। এই উপন্যাসটির গল্পের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন তার কালজয়ী নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’। নাটকটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে কাল্পনিক চরিত্র বাকেরের ফাঁসি ঠেকাতে মানুষজন সারাদেশে মিছিল করেছিল!
হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন লেখক যার রচিত লেখাগুলোর মধ্য থেকে সেরা পাঁচটি উপন্যাস খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তার লেখা আরও কিছু সেরা উপন্যাস হলো— অপেক্ষা, অচিনপুর, দূরে কোথাও, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, দেয়াল, শুভ্র, দেবী, বহুব্রীহি, তেঁতুল বনে জোছনা, কুটুমিয়া, কবি ইত্যাদি।
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— আমার পড়া হুমায়ূন আহমেদের সেরা পাঁচটি উপন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে চাইলে ডেইলি লাইভ সাইটে চোখ রাখুন।
ফেরা, জনম জনম, শঙখনীল কারগার ❤️❤️