অ্যাশেজ : শতাব্দী-প্রাচীন এক গৌরবময় সিরিজ!
অ্যাশেজ, ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। সিরিজটি ক্রিকেটের সমৃদ্ধ দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা হয়, যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো ও আলোচিত দুই প্রতিপক্ষ। অ্যাশেজ সিরিজ মোট পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ নিয়ে গঠিত, স্বাভাবিক টেস্টের নিয়মেই প্রতিটি ম্যাচ পাঁচ দিন ধরে খেলা হয়। সাধারণত প্রতি দুই বছর পরপর পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে সিরিজটি খেলা হয় এবং যে দল বেশির ভাগ ম্যাচ জিতে তারাই অ্যাশেজের বিজয়ী দল হয়।
সিরিজটির নামকরণ করা হয়েছে অনেকটা কলসির মতো দেখতে একটি ছোটো ছাইদানির নাম থেকে। যার মধ্যে একটি ক্রিকেট বলের ছাই থাকে। ১৮৮২ সালে একটি টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পর এই ছাইদানির প্রচলন ঘটে। মূলত সেসময় এটাকে ইংরেজ ক্রিকেটের ছাইয়ের প্রতীক বলে মনে করা হতো।
⏩ আরও পড়ুন: টিকিটাকা : শুরুটা হয়েছিল যেভাবে!
সঙ্গত কারণেই অ্যাশেজ সিরিজ ইংরেজ এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। অ্যাশেজের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে আজ অব্দি এটি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কিছু মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড উভয় দলই অ্যাশেজ জয়ের জন্য কঠোর লড়াই এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ভক্তদের জন্য অ্যাশেজ জয় খুবই গর্বের এবং সম্মানের বিষয়।
অ্যাশেজ সিরিজকে এই দুইটি দলের চাপের মধ্যে পারফর্ম করার ক্ষমতার চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসাবে দেখা হয় এবং একই সাথে এই সিরিজ জয়কে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চূড়ান্ত সাফল্যের একটি হিসাবে দেখা হয়। এমনকি অনেক ইংরেজ ও অজি ক্রিকেট ভক্ত এই সিরিজকে বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি মর্যাদাবান হিসেবে মনে করেন।
অ্যাশেজের সাথে জড়িত ইতিহাস, ঐতিহ্য এটিকে ক্রিকেট ইতিহাসের একটি বিশেষ অংশ করে তুলেছে। যেমন ১৯৩২-৩৩ সালের বিখ্যাত ‘বডিলাইন’ সিরিজ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত তৈরি করেছে, যেখানে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মোকাবেলা করার জন্য কিছু বিতর্কিত কৌশল ব্যবহার করেছিল। যা ক্রিকেট ইতিহাসে আজ, প্রায় একশো বছর পরেও আলোচনা হয়ে থাকে।
দুই দেশের ক্রিকেটের জন্য অ্যাশেজ সিরিজ এত বিশেষ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা। দুই দল এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে একে অপরের সাথে খেলছে এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাত্রাও তীব্র। অ্যাশেজ সিরিজ সেকারণেই শুধু ট্রফি জেতার জন্য নয়। বরং এটিকে গর্ব, সম্মান, এবং আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে অ্যাশেজে পরাজিত হওয়াকে দুই দেশেই খুব লজ্জা ও হতাশার সাথে দেখা হয়।
⏩ আরও পড়ুন: ফুটবল বিশ্বকাপের আট মজার ঘটনা!
এছাড়াও অ্যাশেজ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে বলা যায়, এটি তরুণ খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। সিরিজটি সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেন, এবং অ্যাশেজে ভালো পারফর্ম করা একজন তরুণ খেলোয়াড়কে, ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকটা সাহায্য করে। রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়া এবং গ্লেন ম্যাকগ্রাদের মতো অনেক গ্রেট ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে অ্যাশেজ সিরিজে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এবং সেখান থেকেই নিজেদের লাইমলাইটে নিয়ে এসেছেন।
সবশেষে বলতে গেলে, অ্যাশেজ সিরিজের সাথে জড়িত প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর এসব কারণেই অ্যাশেজকে এই দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তরা ভীষণ আবেগ, ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখে!
দারুণ লেখা!