টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা!

টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা!

সারা বিশ্বব্যাপী টক দইয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। রন্ধন শিল্পে টক দই ছাড়া অনেক সুস্বাদু পদই অসম্পন্ন প্রায়। বিদেশে তো রীতিমতো টক দইকে প্রতিদিনের ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া হয়। কিন্তু, কেবল কি স্বাদের জন্যই টক দইয়ের এমন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা? উত্তর হলো- না। টক দই আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে, অনেক বাঙালি না জেনেও প্রতিদিনের রান্নায় টক দই ব্যবহার করেন। যেমন- রোস্ট, বিরিয়ানি, কারি, দই বড়া, ইত্যাদি রান্নায় টক দই আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করি। কিন্তু, এই টকদই সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকেই জানি না। তো, ডেইলি লাইভের আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব— টক দই কী, টক দইয়ের প্রস্তুত প্রণালি, টক দইয়ের ব্যবহার, টক দইয়ের পুষ্টি উপাদান এবং টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন শুরু করা যাক।

টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই:

দই বা  Yogurt  দুধের তৈরি একটি খাবার, যেটি দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। এটি মূলত গোরু বা গৃহপালিত প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি করা হয়। তবে মিষ্টি দই এবং টক দইয়ে পার্থক্য এতটুকুই যে, টক দইয়ে (Sour Curd) কোনো প্রকার চিনি ব্যবহার করা হয় না। টক দইকে অনেকে ‘খাট্টা দহি’ও বলে। যেকোনো দই সাধারনত ফার্মান্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। টক দই সারা বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়। কেন না, টক দই একই সাথে স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর। জানা যায়, প্রায় ৪৫০০ বছর ধরে মানুষ দই তৈরি করছে। তবে, ঠিক কবে থেকে তা সঠিক জানা যায় নি। তবে, গল্প প্রচলিত আছে- যাযাবর জাতি নোমাডিকরাই ঘটিয়েছিল এর প্রচলন। তাও অবশ্য দুর্ঘটনাক্রমে। তারা প্রাণীর চামড়ায় তৈরি করা পাত্র বা থলেতে বহন করত দুধ। আর প্রাণীর চামড়াকে ব্যাক্টেরিয়ার জন্য আর্দশ স্থান বলা চলে। ফলে সেই ব্যাক্টরিয়ার সংস্পর্শে এসে ফার্মান্টেশন (Fermentation) বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় চামড়ার পাত্রে অবস্থান করা দুধ দইয়ে পরিণত হতো।

⏩ আরও পড়ুন: ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়!

টক দইয়ের পুষ্টি উপাদান:

আগেই বলেছি টক দই পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে বিদ্যমান রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন ধরনের ভালো ব্যাক্টেরিয়া। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, ইত্যাদি), ফসফরাস, ইত্যাদি।

টক দইয়ের প্রস্তুত প্রণালি:

টক দই তৈরি করতে বেশি উপাদানের দরকার পড়ে না। কেবল গোরুর দুধ ও দই বীজ (পুরোনো দই) থাকলেই হবে। প্রথমে গোরুর দুধ যতটুকু নেবেন তা চুলায় জাল করে অর্ধেক করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বারবার চামচ দিয়ে নাড়তে হবে, যা তলায় লেগে না যায়। এরপর দুধকে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। তবে, কুসুম বা হালকা গরম অবস্থা। কোনো মতেই একেবারে ঠাণ্ডা করা যাবে না। এরপর কুসুম গরম দুধে দই বীজ ঢেলে ভালো করে নেড়ে দিতে হবে। এবার কম্বল বা ভারি কাপড় দিয়ে পাত্রটিকে পেচিয়ে সারা রাত রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে টক দই। চাইলে এভাবে তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে টক দইয়ের গঠন আরেকটু ঘন হবে।

টক দইয়ের ব্যবহার:

টক দইয়ের পুষ্টিগুণ ও স্বাদের জন্য এর নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। এটি সবার পরিচিত রোস্ট, বিরিয়ানি, শরবত, রেজালা রান্নায় তো ব্যবহৃত হয়ই। তাছাড়াও বিভিন্ন বিদেশি ও দেশি রান্নায়ও এর ব্যবহার হয়। এটি ব্যবহারে যেকোনো খাবারই পায় আলাদা এক স্বাদ। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রূপচর্চায় এর ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। আবার, চুলের সমস্যাতেও এর ব্যবহার করা হয়।

⏩ আরও পড়ুন: কলার উপকারিতা ও অপকারিতা!

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা জানলাম, টক দই কী, এটির রেসিপি, ব্যবহার ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো— টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নিই—

টক দইয়ের উপকারিতা:

বলা হয়ে থাকে, দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকে এই টক দইয়ে। যার দরুণ টক দই খেলে মেলে নানা উপকারিতা। যেমন—

১। হাঁড় মজবুত করতে টক দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। কেন না, টক দইয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।

২। টক দইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দাঁতও মজবুত করে। তাই, যারা দাঁতের সমস্যায় ভুগে তাদের ডাক্তাররা নিয়মিত টক দই খাওয়ার পরামর্শ দেন।

৩। এছাড়াও নিয়মিত টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ টক দইয়ে বিদ্যমান রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়া। এসব ভালো ব্যাক্টেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে, শরীর সুস্থ থাকে।

৪। টক দইয়ে উপস্থিত থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে।

৫। নিয়মিত টক দই খেলে আমাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে পারে না। ফলে, শরীর সুস্থ থাকে এবং দ্রুত বার্ধক্য ধরা দেয় না।

৬। যেহেতু টক দইয়ে ল্যাকটিক আসিড বিদ্যমান, তাই টক দই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়াও এটি খাবার হজমেও সহায়তা করে।

৭। ওজন কমাতে টক দই বেশ কার্যকর। কারণ এটিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে আমিষ দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। টক দই কেবল ওজন কমায় তা নয়। যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের জন্যও বেশ কার্যকর। কেবল খাওয়ার পদ্ধতি ভিন্ন।

৮। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও টক দইয়ের রয়েছে ভূমিকা।

৯। তাছাড়াও টক দই নিয়মিত খেলে তা কোলন ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলসহ নানা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার, টক দই খেলে কেবল দেহের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর হয় এমন নয়। এটি ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। তাই তো বিভিন্ন ফেসপ্যাক ও হেয়ার প্যাকে অন্যতম উপাদান হিসেবে থাকে এই টক দই।

⏩ আরও পড়ুন: কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা!

টক দইয়ের অপকারিতা:

অবাক হবার বিষয় হলেও সত্যি, এত এত উপকারিতার ভিড়ে বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে এই টক দইয়ের। তবে, অপকারিতা বলতে এটাই যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, কোনো ক্রমেই একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০০ গ্রামের ওপরে টক দই খাওয়া ঠিক না। এছাড়াও যাদের ল্যাক্টোজ গ্রহণে সমস্যা রয়েছে, তারা খেলে তাদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কেউ যদি টক দইয়ে চিনি মিশিয়ে খায়, তবে তা ডায়াবেটিসের সমস্যা বয়ে আনতে পারে। তাই, চিনির পরিবর্তে কিসমিস বা তাজা ফল মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এছাড়াও যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা রয়েছে তারা ফ্রিজের ঠাণ্ডা দই খেলে সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই, যেকোনো খাবার খাওয়ার পূর্বে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সবার শরীর এক নয়।

**********

যাই হোক, প্রিয় পাঠক, এই ছিল— টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত! আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত। পোস্টটি ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের পোস্ট আরও পড়তে ডেইলি লাইভ সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা!”

মন্তব্য করুন:

Scroll to Top